তাফসীর:_ সূরা আল-বাকারা - আয়াত নং ২৮২ বিষয়__ ঋণ আদান-প্রদানের কথা লিখে রাখার উপকারিতা।

তাফসীরে আহসানুল-বায়ান: 
সূরা ২. আল-বাকারা - আয়াত নং ২৮২ 
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পরস্পর ঋণ দেওয়া-নেওয়া কর, তখন তা লিখে নাও।[1] আর তোমাদের মধ্যে কোন লেখক যেন ন্যায়ভাবে তা লিখে দেয় এবং আল্লাহ যেরূপ শিক্ষা দিয়েছেন --সেইরূপ লিখতে কোন লেখক যেন অস্বীকার না করে। অতএব তার লিখে দেওয়াই উচিত। আর ঋণগ্রহীতা যেন লেখার বিষয় বলে দিয়ে লিখিয়ে নেয়[2] এবং সে যেন স্বীয় প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করে এবং লেখার মধ্যে বিন্দুমাত্র কম-বেশী না করে। অনন্তর ঋণগ্রহীতা যদি নির্বোধ হয় কিংবা দুর্বল হয় অথবা নিজে লেখার বিষয়বস্তু বলে দিতে অক্ষম হয়, তাহলে তার অভিভাবক যেন ন্যায়সঙ্গতভাবে তা লেখায়। আর তোমাদের মধ্যে দু’জন পুরুষকে (এই আদান-প্রদানের) সাক্ষী কর। যদি দু’জন পুরুষ না পাও, তাহলে সাক্ষীদের মধ্যে যাদেরকে তোমরা পছন্দ কর তাদের মধ্য হতে একজন পুরুষ ও দু’জন মহিলাকে সাক্ষী কর; [3] যাতে মহিলাদ্বয়ের একজন ভুলে গেলে যেন অন্য জন তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।[4] আর যখন (সাক্ষ্য দিতে) ডাকা হয়, তখন যেন সাক্ষীরা অস্বীকার না করে। (ঋণ) ছোট হোক, বড় হোক, তোমরা মেয়াদসহ লিখতে কোনরূপ অলসতা করো না। এ লেখা আল্লাহর নিকট ন্যায্যতর ও সাক্ষ্য (প্রমাণের) জন্য দৃঢ়তর এবং তোমাদের মধ্যে সন্দেহ উদ্রেক না হওয়ার অধিক নিকটতর।[5] কিন্তু তোমরা পরস্পরে ব্যবসায় যে নগদ আদান-প্রদান কর, তা না লিখলে কোন দোষ নেই। তোমরা যখন পরস্পর বেচা-কেনা কর, তখন সাক্ষী রাখ।[6] আর কোন লেখক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং না কোন সাক্ষী।[7] যদি তোমরা তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত কর, তাহলে তা হবে তোমাদের পক্ষে পাপের বিষয়। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর।[8] আল্লাহ তোমাদেরকে শিক্ষা দেন। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে মহাজ্ঞান 
*****************************************
[1] যে সমাজে সূদী কার্যকলাপকে কঠোরভাবে নিষেধ করে সাদাকা-খয়রাত করার প্রতি তাকীদ করা হয়েছে, সেই সমাজে ঋণ করার প্রয়োজন পড়ে বেশী। কারণ সূদ তো হারাম এবং সব মানুষ সাদাকা-খয়রাত করার সামর্থ্য রাখে না। তাছাড়া সব লোক সাদাকা নিতে পছন্দও করে না। সুতরাং স্বীয় প্রয়োজন পূরণ করার জন্য উপায় এখন ঋণ আদান-প্রদান করা। আর এই কারণেই ঋণ দেওয়া যে বড় ফযীলতের কাজ, সে কথা বহু হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। তবে ঋণ যেহেতু অতীব প্রয়োজনীয় জিনিস, তাই এর প্রতি গুরুত্ব না দিলে অথবা এ ব্যাপারে অলসতা করলে, তা কলহ-বিবাদের কারণও হতে পারে। তাই এই আয়াতে --যাকে ‘আয়াতুদ দাইন’ বলা হয় এবং যেটা কুরআনের মধ্যে সব থেকে লম্বা আয়াত -তাতে মহান আল্লাহ ঋণের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দান করেছেন। যাতে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনটি কলহ-বিবাদের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। কাজেই এ ব্যাপারে একটি নির্দেশ হল, মেয়াদ নির্দিষ্ট করে নাও। দ্বিতীয় নির্দেশ, এটা লিখে নাও এবং তৃতীয় নির্দেশ হল, এর উপর দু’জন মুসলিম পুরুষকে অথবা একজন পুরুষ ও দু’জন মহিলাকে সাক্ষী বানিয়ে নাও।

[2] এ থেকে ঋণগ্রহীতাকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, সে যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং টাকার যেন সঠিক পরিমাণ লিখায়, কম করে যেন না লিখায়। এর পর বলা হচ্ছে, ঋণগ্রহীতা যদি নির্বোধ অথবা দুর্বল শিশু কিংবা পাগল হয়, তাহলে তার অভিভাবকের উচিত ইনসাফের সাথে লিখিয়ে নেওয়া, যাতে ঋণদাতার কোন ক্ষতি না হয়।

[3] অর্থাৎ, যাদের দ্বীনদারী ও ন্যায়-নিষ্ঠার ব্যাপারে তোমরা পূর্ণ আস্থাবান। কুরআনের এই আয়াত দ্বারা এ কথাও জানা গেল যে, দু’জন মহিলার সাক্ষী একজন পুরুষের সমান। অনুরূপ পুরুষ ছাড়াই কেবল একজন মহিলার সাক্ষী জায়েয নয়; কেবল সেই ব্যাপারগুলো ছাড়া যে ব্যাপার মহিলা ব্যতীত অন্য কারো জানা সম্ভব নয়। তবে বাদীর (অভিযোক্তার) একটি কসমের সাথে দু’জন মহিলার সাক্ষীর ভিত্তিতে ফয়সালা করা জায়েয না নাজায়েয, এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। যেমন, একজন পুরুষ সাক্ষী দিলে এবং দ্বিতীয় সাক্ষীর পরিবর্তে বাদী কসম খেলে ফায়সালা করা জায়েয। হানাফী ফক্বীহদের নিকট এ রকম করা জায়েয নয়। তবে মুহাদ্দিসীনগণ জায়েয হওয়ার কথাই ব্যক্ত করেছেন। কারণ, হাদীসে একজন সাক্ষী এবং কসমের সাথে ফায়সালা করা প্রমাণিত। আর দু’জন মহিলা যখন একজন পুরুষ সাক্ষীর সমান, তখন দু’জন মহিলা এবং কসমের সাথে ফায়সালা করা অবশ্যই জায়েয হবে। (ফাতহুল ক্বাদীর)

[4] এখানে একজন পুরুষের মোকাবেলায় দু’জন মহিলার সমান হওয়ার কারণ ও যুক্তি আছে। অর্থাৎ, মহিলা জ্ঞান ও স্মরণশক্তিতে পুরুষের থেকে দুর্বল। (যেমন মুসলিম শরীফের হাদীসে মহিলাকে কম জ্ঞানের অধিকারিণী বলা হয়েছে।) এখানে মহিলাকে ছোট ও তুচ্ছ সাব্যস্ত করা উদ্দেশ্য নয়। (যেমন, অনেকে বুঝাতে চেষ্টা করে।) বরং উদ্দেশ্য হল, একটি প্রাকৃতিক দুর্বলতার কথা বর্ণনা করা; যা মহান আল্লাহর ইচ্ছা এবং তাঁর কৌশলগত ব্যাপারের অন্তর্ভুক্ত। অহংকারবশতঃ কেউ যদি তা স্বীকার না করে, তাহলে তার ব্যাপার ভিন্ন। তবে প্রকৃতার্থে এবং বাস্তবতার দিক দিয়ে এটা অস্বীকারযোগ্য নয়।

[5] এটা ঋণ আদান-প্রদানের কথা লিখে রাখার উপকারিতা। এ থেকে সুবিচারের দাবীসমূহ পূরণ হবে, সাক্ষীও ঠিক থাকবে (সাক্ষীর মৃত্যুর পর এবং তার অনুপস্থিত থাকাকালীন এই লেখা কাজে আসবে।) এবং সন্দেহ-সংশয় থেকে উভয় পক্ষ হিফাযতে থাকবে। কারণ, সন্দেহের সৃষ্টি হলে লেখা দেখে তা দূর করে নেওয়া যেতে পারে।

[6] এটা এমন বেচা-কেনা যা ধারে হয় অথবা দাম-দর হয়ে যাওয়ার পরও যাতে ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। নচেৎ ইতিপূর্বে নগদ বেচা-কেনার কথা লিখে নেওয়ার নির্দেশ থেকে পৃথক করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, এই বেচা-কেনা থেকে উদ্দেশ্য হল, জমি-জায়গা, বাড়ি-দোকান, বাগান ও পশু বেচা-কেনা। (আয়সারুত তাফাসীর)

[7] তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হল, কোন দূর-দূরান্ত অঞ্চলে তাদেরকে ডেকে আনা; যার কারণে তাদের নিজেদের কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে অথবা ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। (তাদেরকে রাহাখরচ না দেওয়া) কিংবা তাদেরকে মিথ্যা কথা লিখতে এবং মিথ্যা সাক্ষী দিতে বাধ্য করা ইত্যাদি।
[8] অর্থাৎ, যে বিষয়গুলোর প্রতি তাকীদ করা হয়েছে, সেগুলোর উপর আমল কর এবং যে সব জিনিস থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে, তা থেকে বিরত থাকো। 
*****************************************

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا تَدَایَنۡتُمۡ بِدَیۡنٍ اِلٰۤی اَجَلٍ مُّسَمًّی فَاکۡتُبُوۡہُ ؕ وَ لۡیَکۡتُبۡ بَّیۡنَکُمۡ کَاتِبٌۢ بِالۡعَدۡلِ ۪ وَ لَا یَاۡبَ کَاتِبٌ اَنۡ یَّکۡتُبَ کَمَا عَلَّمَہُ اللّٰہُ فَلۡیَکۡتُبۡ ۚ وَ لۡیُمۡلِلِ الَّذِیۡ عَلَیۡہِ الۡحَقُّ وَ لۡیَتَّقِ اللّٰہَ رَبَّہٗ وَ لَا یَبۡخَسۡ مِنۡہُ شَیۡئًا ؕ فَاِنۡ کَانَ الَّذِیۡ عَلَیۡہِ الۡحَقُّ سَفِیۡہًا اَوۡ ضَعِیۡفًا اَوۡ لَا یَسۡتَطِیۡعُ اَنۡ یُّمِلَّ ہُوَ فَلۡیُمۡلِلۡ وَلِیُّہٗ بِالۡعَدۡلِ ؕ وَ اسۡتَشۡہِدُوۡا شَہِیۡدَیۡنِ مِنۡ رِّجَالِکُمۡ ۚ فَاِنۡ لَّمۡ یَکُوۡنَا رَجُلَیۡنِ فَرَجُلٌ وَّ امۡرَاَتٰنِ مِمَّنۡ تَرۡضَوۡنَ مِنَ الشُّہَدَآءِ اَنۡ تَضِلَّ اِحۡدٰىہُمَا فَتُذَکِّرَ اِحۡدٰىہُمَا الۡاُخۡرٰی ؕ وَ لَا یَاۡبَ الشُّہَدَآءُ اِذَا مَا دُعُوۡا ؕ وَ لَا تَسۡـَٔمُوۡۤا اَنۡ تَکۡتُبُوۡہُ صَغِیۡرًا اَوۡ کَبِیۡرًا اِلٰۤی اَجَلِہٖ ؕ ذٰلِکُمۡ اَقۡسَطُ عِنۡدَ اللّٰہِ وَ اَقۡوَمُ لِلشَّہَادَۃِ وَ اَدۡنٰۤی اَلَّا تَرۡتَابُوۡۤا اِلَّاۤ اَنۡ تَکُوۡنَ تِجَارَۃً حَاضِرَۃً تُدِیۡرُوۡنَہَا بَیۡنَکُمۡ فَلَیۡسَ عَلَیۡکُمۡ جُنَاحٌ اَلَّا تَکۡتُبُوۡہَا ؕ وَ اَشۡہِدُوۡۤا اِذَا تَبَایَعۡتُمۡ ۪ وَ لَا یُضَآرَّ کَاتِبٌ وَّ لَا شَہِیۡدٌ ۬ؕ وَ اِنۡ تَفۡعَلُوۡا فَاِنَّہٗ فُسُوۡقٌۢ بِکُمۡ ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰہَ ؕ وَ یُعَلِّمُکُمُ اللّٰہُ ؕ وَ اللّٰہُ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ ﴿۲۸۲﴾

*****************************************
@Copyright_  Atowar Rahman Salafi
www.atowar-rahman-salafi.blogspot.com

Comments

|| Popular Posts ||

বিষয়__ জাহান্নামের স্তরসমূহ এবং শাস্তি _ গ্রন্থঃ জান্নাত-জাহান্নাম

Moving the finger during Tashahhud _ Important Masala-Masael,

Question:What is the correct explanation for the Prophet's saying: "The one who knows the most Qur'aan should lead the people in prayer…"? _ Fatwa collection

আল-ইতিছাম pdf download _ al itisham

The Prophet warns his kindred of idolatry....

The Story of Qarun(Korah)

টাখনুর নীচে কাপড় পরিধানের শাস্তি :

Why Allah sent Prophets and Messengers ? – Muhsin Khan & Hilaali