গ্রন্থঃ উপদেশ | লেখক_ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ

কিছু উপদেশ:

عَن تَمِيم الدَّارِيّ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم النَّصِيحَةُ ثَلَاثًا. قُلْنَا: لِمَنْ؟ قَالَ: لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ.

তামীম আদ-দারী (রাঃ) হতে বর্ণিত নবী কারীম (ছাঃ) বলেন, ‘দ্বীন হচ্ছে যথাযথভাবে কল্যাণ কামনা করা’ কথাটি নবী কারীম (ছাঃ) তিনবার বললেন। আমরা বললাম, কার জন্য? তিনি বললেন, আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসূলের জন্য, মুসলিম নেতাদের জন্য এবং সাধারণ মুসলমানের জন্য (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৬৬)

عَنْ جَرِيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ بَايَعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى إِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ.

জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে অঙ্গীকার করেছি, ছালাত প্রতিষ্ঠা করার জন্য, যাকাত প্রদান করার জন্য এবং সকল মুসলমানের কল্যাণ কামনা করার জন্য।

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى اللهُ عليه وسلم إِنَّ اللهَ يَرْضَى لَكُمْ ثَلاَثاً وَيَسْخَطُ لَكُمْ ثَلاَثاً يَرْضَى لَكُمْ أَنْ تَعْبُدُوهُ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئاً وَأَنْ تَعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيعاً وَلاَ تَفَرَّقُوا وَأَنْ تُنَاصِحُوا مَنْ وَلاَّهُ اللهُ أَمْرَكُمْ وَيَسْخَطُ لَكُمْ قِيلَ وَقَالَ وَإِضَاعَةُ الْمَالِ وَكَثْرَةُ السُّؤَالِ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের তিনটি কাজে সন্তুষ্ট হন এবং তিনটি কাজে অসন্তুষ্ট হন। (১) যখন তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে বিন্দুমাত্র শরীক করো না। (২) আল্লাহর বিধানকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধর আর বিচ্ছিন্ন হও না এবং (৩) আল্লাহ যাকে তোমাদের কাজের নেতা হিসাবে নির্বাচন করেন, তার জন্য তোমরা পরস্পরে কল্যাণ কামনা কর। এ তিনটি কাজে আল্লাহ তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হন। আর তোমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন- (১) অপ্রয়োজনীয় কথা বললে (২) অপ্রয়োজনীয়ভাবে সম্পদ নষ্ট করলে এবং (৩) অনর্থক বেশী জিজ্ঞাসা করলে।

অত্র হাদীছগুলিতে نَصِيحَةٌ (উপদেশ) একটি শব্দ রয়েছে, যার ভাবার্থ এক কথায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে অল্প কথায় এভাবে বলা যায় যে, প্রত্যেকের যথাযথ হক বা অধিকার খালেছভাবে আদায় করাই হচ্ছে ‘নছীহত’। আল্লাহর জন্য উপদেশ হচ্ছে, তাঁর সাথে কোন প্রকার শরীক না করা। তাঁর কিতাবের জন্য উপদেশ হচ্ছে, তা যথাযথভাবে তেলাওয়াত করা, জানা-বুঝা ও মান্য করা। রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য উপদেশ হচ্ছে, যথাযথভাবে কথা ও কর্মে তাঁর আনুগত্য করা। মুসলিম নেতাদের জন্য উপদেশ হচ্ছে, তাঁর যথাযথ আনুগত্য করা। ভুল-ত্রুটি দেখলে ধৈর্য ধারণ করা এবং সার্বক্ষণিক তাঁর কল্যাণ কামনা করা। আর সাধারণ মুসলমানের জন্য উপদেশ হচ্ছে, পরস্পরে পরস্পরের কল্যাণ কামনা করা। আর নেতার জন্য উপদেশ হচ্ছে তার কাজে সহায়তা করা। তার বিরোধিতা না করা, তার ক্রটি দেখলে ধৈর্য ধারণ করা।

মুসলমানের জন্য যরূরী হচ্ছে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ জানা এবং তদানুযায়ী আমল করা। জেনে না মানা বা না মানার উদ্দেশ্যে জানা মুনাফিকের আমল। কাজেই মেনে চলার উদ্দেশ্যে জানা একামত্ম কর্তব্য। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে বলেন, وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا ‘মুমিন তারাই যারা বলে, আমরা শ্রবণ করেছি (জেনেছি) ও মান্য করেছি’ (বাক্বারাহ ২৮৫)।

فبايعناه على ذلك

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যে কথাগুলি বলতেন সে কথাগুলি মেনে চলার জন্য ছাহাবীদের নিকট থেকে ওয়াদা বা অঙ্গীকার নিতেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৮)।

কোন কোন ছাহাবী রাসূল (ছাঃ)-এর মুখ থেকে কিছু শুনে বলতেন, وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا أَزِيدُ عَلَى هَذَا شَيْئًا وَلَا أَنْقُصُ مِنْهُ. আল্লাহর কসম যা শুনলাম তার কম-বেশী করব ন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৪)। ছাহাবীগণ শরী‘আত শোনার জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট আসতেন এবং সে অনুপাতে আমল করে জান্নাত পাওয়ার আকঙ্খা পোষণ করতেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৭)। ছাহাবীগণ জান্নাতে প্রবেশের এবং জাহানণাম থেকে মুক্তিলাভের আমল শুনতে চাইতেন (তিরমিযী, মিশকাত হা/২৯, হাদীছ ছহীহ)।

আলোচ্য হাদীছ সমূহ দ্বারা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয় যে, জাহান্নাম থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে এবং জান্নাত লাভের আশায় আলেমদের নিকট কুরআন-হাদীছ শুনতে হবে এবং সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। এখানে যেহেতু আমল করার উদ্দেশ্যে শুনতে হবে, কাজেই সত্য-মিথ্যা যাচাই করে শুনা একান্ত যরূরী।

কারণ বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে বানাওয়াট ও জাল হাদীছ রয়েছে এবং মিথ্যা তাফসীর রয়েছে। আর সে কারণে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ছাঃ) মুসলমানকে যথাযথভাবে সতর্ক করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَنْ تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ ‘হে মুমিনগণ! যদি কোন ফাসিক ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে তবে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখ, যেন অজ্ঞতাবশত তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতি না কর এবং নিজেদের কর্মের জন্য অনুতপ্ত হও’ (হুজুরাত ৬)। এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কোন ব্যক্তি যে কোন ব্যাপারে কোন কথা বললে তা তদন্ত করে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় এর ফলাফল হবে অপমানজনক। মুফাসসির জাসসাস (রহঃ) স্বীয় ‘আহকামুল কুরআনে’ বলেন, এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, কোন ফাসিক ও পাপাচারীর খবর কবুল করা এবং তদনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা জায়েয নয়, যে পর্যন্ত না অন্যান্য উপায়ে তদন্ত করে এর সত্যতা প্রমাণিত হয়।

দুর্ভাগ্য যে, আমাদের দেশে অধিকাংশ বক্তাই যাচাই-বাছাই করে বক্তব্য পেশ করেন না। কাজেই আমাদের জন্য যরূরী হচ্ছে, তাদের বক্তব্যকে যাচাই-বাছাই করে আমল করা। অন্যথায় আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবো। অত্র আয়াতটি ইমাম নববী মুসলিম শরীফের ভূমিকায় উদ্ধৃত করে সকলকে এ বলে সতর্ক করেছেন যে, হাদীছ বর্ণনাকারীর সততা যাচাই করতে হবে এবং ফাসিক্ব মুহাদ্দিছের কথা শ্রবণ থেকে বিরত থাকতে হবে। যারা সত্য-মিথ্যা যাচাই-বাছাই করে বক্তব্য পেশ করেন না তাদের থেকে বেঁচে থাকতে হবে।

عَنْ أبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِيْ آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُوْنَ كَذَّبُوْنَ يَأتُوْنَكُمْ مِنَ الأحَادِيْثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوْا أنْتُمْ وَلاَ أبَائُكُمْ فَإيَّاكُمْ وَ إيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّوْنَكُمْ وَلاَ يُفْتِنُوْنَكُمْ.

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, শেষ যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। তারা তোমাদের নিকট এমন সব অলীক কথা-বার্তা উপস্থিত করবে, যা না তোমরা শুনেছ না তোমাদের বাপ-দাদা শুনেছে। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে বেঁচে থাকো এবং তাদেরকে তোমাদের থেকে বাঁচাও। অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে বিরত থাক। যাতে তোমাদের পথভ্রষ্ট করতে না পারে এবং তোমাদের বিপথগামী করতে না পারে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৫৪)।

ইসলাম এমন একটি শরী‘আত, যার প্রতিটি কাজ দলীল ভিত্তিক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللهِ عَلَى بَصِيرَةٍ ‘হে নবী! আপনি বলুন, আমি আল্লাহর পথে ডাকি স্পষ্ট দলীল সহকারে’ (ইউসুফ ১০৮)। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, الْبَيِّنَةُ عَلَى الْمُدَّعِي যে কোন ব্যাপারে দাবীদারকে দলীল পেশ করতে হবে (তিরমিযী, মিশকাত হা/৩৭৬৯, হাদীছ ছহীহ)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنِ ادَّعَى مَا لَيْسَ لَهُ فَلَيْسَ مِنَّا وَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ যে ব্যক্তি এমন কিছুর দাবী করে যা তার নয় অথবা তার অবগতিতে নেই, তাহ’লে সে আমার শরী‘আতের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং সে তার বাসস্থান জাহান্নামে করে নেয়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৭৬৫)।

পাঠককে স্পষ্ট দলীল সহকারে জানতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ‘যে বিষয়ে তোমাদের জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে আলেমদের নিকট স্পষ্ট দলীল সহকারে জেনে নাও’ (নাহল ৪৩)। অত্র আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যারা দলীল সহকারে শরী‘আত জানার চেষ্টা করে না, তারা আল্লাহর আদেশ অমান্যকারী। বানাওয়াট কাহিনী, বুযুর্গানে দ্বীনের অলৌকিক ঘটনা, অলী-দরবেশের গল্প-কাহিনী ও মিথ্যা তাফসীর মুসলমানদেরকে সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে।

আল্লাহভীতি

আল্লাহভীতি মানুষের জীবনের মূল ভিত্তি। তাক্বওয়াশীল মানুষই জান্নাতে যাবে। এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে গিয়ে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘গাভীর বাট থেকে দুধ বের করে তা পুনরায় ভিতরে ঢোকানো যেমন অসম্ভব, আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারী ব্যক্তির জাহান্নামে যাওয়া তেমনি অসম্ভব। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَيَخِرُّوْنَ لِلْأَذْقَانِ يَبْكُوْنَ وَيَزِيْدُهُمْ خُشُوْعًا ‘আর তারা কাঁদতে কাঁদতে নত মুখে লুটিয়ে পড়ে এবং কান্নার শব্দ শুনে তাদের নিবিড় আনুগত্য আরো বৃদ্ধি পায়’ (ইসরা ১০৯)। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, أَفَمِنْ هَذَا الْحَدِيْثِ تَعْجَبُوْنَ، وَتَضْحَكُوْنَ وَلَا تَبْكُوْنَ، وَأَنْتُمْ سَامِدُوْنَ، فَاسْجُدُوْا لِلَّهِ وَاعْبُدُوْا- ‘তোমরা ক্বিয়ামতের বিভীষিকাময় কথা শুনে আশ্চর্য হচ্ছ, হাসছ অথচ কাঁদছ না? আর গান-বাজনায় মত্ত হয়ে এসব এড়িয়ে যাচ্ছ। আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য ধুলায় লুটিয়ে পড় এবং তাঁর ইবাদতে মগ্ন হও’ (নাজম ৫৯-৬২)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وسَلَّمَ سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمْ اللهُ فِيْ ظِلّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ : إِمَامٌ عَادِلٌ، وَشَابٌّ نَشَأَ فِيْ عِبَادَةِ اللهِ، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِي الْمَسَاجِد، إِذَا خَرَجَ مِنْهُ حَتَّى يَعُوْدَ إِلَيْهِ، وَرَجُلاَنِ تَحَابًّا فِي اللهِ اِجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ حَسَبٍ وَجَمَالٍ، فَقَالَ إِنِّيْ أَخَافُ اللهَ، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِيْنُهُ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘সাত শ্রেণীর লোককে আল্লাহ তাঁর ছায়া দিবেন যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না। (১) ন্যায়পরায়ণ শাসক, (২) সেই যুবক যে আল্লাহর ইবাদতে বড় হয়েছে, (৩) সে ব্যক্তি যার অন্তর সর্বদা মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে, সেখান থেকে বের হয়ে আসার পর তথায় ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত, (৪) এমন দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর ওয়াস্তে পরস্পরকে ভালবাসে। আল্লাহর ওয়াস্তে উভয়ে মিলিত হয় এবং তাঁরজন্যই পৃথক হয়ে যায়, (৫) এমন ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে আর তার দুই চক্ষু অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে, (৬) এমন ব্যক্তি যাকে কোন সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী আহবান করে আর সে বলে আমি আল্লাহকে ভয় করি এবং (৭) সে ব্যক্তি যে গোপনে দান করে। এমনকি তার বাম হাত জানতে পারে না তার ডান হাত কি দান করে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭০১; বাংলা মিশকাত হা/৬৪৯)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ عَيْنَانِ لاَ تَمَسُّهُمَا النَّارُ عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ وَعَيْنٌ بَاتَتْ تَحْرُسُ فِى سَبِيلِ اللهِ.

ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘দুই প্রকার চক্ষুকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। যে চক্ষু আল্লাহর ভয়ে কাঁদে এবং যে চক্ষু আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেয়’ (তিরমিযী, আত-তারগীব হা/৪৭০৭)

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَ يَلِجُ النَّارَ رَجُلٌ بَكَى مِنْ خَشْيَةِ اللهِ حَتَّى يَعُودَ اللَّبَنُ فِى الضَّرْعِ وَلاَ يَجْتَمِعُ غُبَارٌ فِى سَبِيلِ اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে সে জাহান্নামে যাবে না। দুধ যেমন গাভীর ওলানে ফিরে যাওয়া অসম্ভব। আল্লাহর পথের ধুলা এবং জাহান্নামের আগুন এক সাথে জমা হবে না’ (আত-তারগীব হা/৪৭০৯)

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَيْنَانِ لاَ تَمَسُّهُمَا النَّارُ عَيْنٌ بَاتَتْ تَكْلَأُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَعَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشِيَةِ اللهِ

আনাস (রাঃ) ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘দুই শ্রেণীর চক্ষু জাহান্নাম দেখবে না। ১. যে চক্ষু আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেয়। ২. যে চক্ষু আল্লাহর ভয়ে কাঁদে’ (আত-তারগীব হা/৪৭১১)

عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ حَيْدَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلاَثَةٌ لاَ تَرَى أَعْيُنُهُمْ النَّارَ عَيْنٌ حَرَسَتْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَعَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشِيَةِ اللهِ وَعَيْنٌ كَفَتْ عَنْ مَحَارِمِ اللهِ.

মু‘আবিয়া ইবনু হায়দা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর মানুষ রয়েছে যাদের চক্ষু জাহান্নাম দেখবে না। এক. যারা আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেয়। দুই. যারা আল্লাহর ভয়ে কাঁদে। তিন. যারা বেগানা নারীকে দেখে চক্ষু নীচু করে’ (আত-তারগীব হা/৪৭১৩)

عَنْ أَبِى أُمَامَةَ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَيْسَ شَىْءٌ أَحَبَّ إِلَى اللهِ مِنْ قَطْرَتَيْنِ وَأَثَرَيْنِ قَطْرَةٌ مِنْ دُمُوعٍ فِى خَشْيَةِ اللهِ وَقَطْرَةُ دَمٍ تُهَرَاقُ فِى سَبِيلِ اللهِ. وَأَمَّا الأَثَرَانِ فَأَثَرٌ فِى سَبِيلِ اللهِ وَأَثَرٌ فِى فَرِيضَةٍ مِنْ فَرَائِضِ اللهِ.

আবু ওমামা বাহেলী (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহর নিকট দু’টি ফোটা বা বিন্দু এবং দু’টি চিহ্নের চেয়ে প্রিয় কিছু নেই। ১.আল্লাহর ভয়ে চক্ষু হতে প্রবাহিত পানির ফোঁটা। ২. আল্লাহর রাস্তায় প্রবাহিত রক্তের ফোঁটা। আর প্রিয় চিহ্ন হচ্ছে আল্লাহর পথে জখমের চিহ্ন এবং আল্লাহর ফরয আদায় করতে করতে পায়ে বা কপালের চিহ্ন’ (তিরমিযী, আত-তারগীব হা/৪৭১৭)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ الثَّالِثُ اَللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي اِسْتَأْجَرْتُ أَجِيْرًا يَوْمًا فَعَمِلَ لِيْ نِصْفَ النَّهَارِ فَأَعْطَيْتُهُ أَجْرًا فَسَخِطَهُ وَلَمْ يَأْخُذْهُ فَوَفَرْتُهَا عَلَيْهِ حَتَّى صَارَ مِنْ ذَلِكَ الْمَالِ ثُمَّ جَاءَ يَطْلُبُ أَجْرَهُ فَقُلْتُ خُذْ هَذَا كُلَّهُ وَلَوْ شِئْتَ لَمْ أُعْطِيْهِ إِلاَّ أَجْرَهُ الْأَوَّلَ فَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّي فَعَلْتُ ذَلِكَ رَجَاءَ رَحْمَتِكَ وَخَشْيَةَ عَذَابِكَ فَاَفْرِجْ عَنَّا فَزَالَ الْحَجَرُ وَخَرَجُوْا يَتَمَاشَوْنَ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তিনজনের তৃতীয়জন বলল, হে আল্লাহ! যদি তুমি জান যে, আমি এক দিনের জন্য একজন দিন মজুর নিয়েছিলাম। সে আমার অর্ধ দিন কাজ করেছিল। আমি তাকে মজুরি দিলাম। সে অসন্তুষ্ট হল এবং পারিশ্রমিক গ্রহণ করল না। আমি সে পয়সাকে বাড়ালাম। শেষ পর্যন্ত তা প্রচুর সম্পদে পরিণত হল। তারপর হঠাৎ একদিন এসে সে তার পারিশ্রমিক চাইল। আমি বললাম, এসব সম্পদ তুমি নিয়ে নাও। আমি ইচ্ছা করলে শুধু সেদিনের পারিশ্রমিক দিতে পারতাম। তুমি যদি মনে কর আমি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টির আশায় এবং তোমার শাস্তির ভয়ে করেছি, তাহলে তুমি আমাদের এ গর্তের মুখ থেকে পাথর সরিয়ে দাও। আল্লাহ পাথর সরিয়ে দিলেন এবং তারা বের হয়ে চলতে লাগল’ (বুখারী, আত-তারগীব হা/৪৭৮১)। এ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তারা গর্তের মধ্যে আল্লাহর রহমতের আশাবাদী হয়ে তাঁর শাস্তির ভয়ে কান্নাকাটি করে বিপদ থেকে বাঁচতে চেয়েছিল। মানুষ বিপদে পড়ে কান্নাকাটি করে এভাবে বাঁচতে চাইলে আল্লাহ তাকে রক্ষা করবেন।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيْمَا يُرْوَي عَنْ رَبِّهِ جَلَّ وَعَلاَ أَنَّهُ قَالَ وَعِزَّتِيْ لاَ أَجْمَعُ عَلَى عَبْدِيْ خَوْفَيْنِ وَأَمْنَيْنِ إِذَا خَافَنِيْ فِيْ الدُّنْيَا أَمَنْتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَإِذَا أَمِنَنِيْ فِيْ الدُّنْيَا أَخَفْتُهُ فِيْ الْآَخِرَةِ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ বলেন, আমার মর্যাদার কসম! আমি আমার বান্দার মাঝে দু’টি ভয় ও দু’টি নিরাপত্তা এক সাথে জমা করি না। যদি দুনিয়াতে আমাকে ভয় করে, আমি তাকে ক্বিয়ামতের দিন নিরাপত্তা দিব। আর যদি দুনিয়াতে আমার ব্যাপারে নিরাপদ থাকে, তাহলে আমি তাকে পরকালে ভীত-সন্ত্রস্ত করব’ (আত-তারগীব হা/৪৭৮৬)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَيْضًا رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ مَنْ خَافَ أَدْلَجَ وَمَنْ أَدْلَجَ بَلَغَ الْمَنْزِلَ أَلاَ إِنَّ سِلْعَةَ اللهِ غَالِيَةٌ أَلاَ إِنَّ سِلْعَةَ اللهِ الْجَنَّةُ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে সে রাতে ইবাদত করে আর যে রাতে ইবাদত করে সে তার গন্তব্য স্থানে পৌঁছে যায়। মনে রেখ নিশ্চয়ই আল্লাহর সম্পদ দামী। মনে রেখ নিশ্চয়ই আল্লাহর সম্পদ হচ্ছে জান্নাত’ (তিরমিযী, আত-তারগীব হা/৪৭৮৭)। এ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যারা আল্লাহর ভয়ে রাতে কাঁদে তাদের জন্য জান্নাত রয়েছে।

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ خَطَبَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خُطْبَةً مَا سَمِعْتُ مِثْلَهَا قَطُّ فَقَالَ لَوْ تَعْلَمُوْنَ مَا أَعْلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيْلاً وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيْرًا فَغَطَّى أَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وُجُوْهَهُمْ لَهُمْ خَنِيْنٌ.

আনাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) একদা এমন খুৎবা দিলেন, যার মত খুৎবা আমি কখনো শুনিনি। যদি তোমরা জানতে যা আমি জানি। তবে কম হাসতে আর বেশী কাঁদতে। তখন রাসূল (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণ তাদের মুখ নিচু করে নিলেন এবং নীরবে কাঁদতে লাগলেন’ (বুখারী, তারগীব হা/৪৭৯৪)

তাক্বওয়া - ১

তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি মুমিন জীবনের মূলভিত্তি। যে ব্যক্তি আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় করে আল্লাহ তার সকল বিষয় সমাধান করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمَنْ يَتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا، وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ- ‘যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার মুক্তির পথ বের করে দেন এবং এমন সূত্রে তাকে রিযিক দেন যার কল্পনা সে করেনি’ (তালাক ২-৩)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلاَ تَمُوتُنَّ إِلاَّ وَأَنْتُمْ مُسْلِمُوْنَ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যেরূপ ভয় করা উচিৎ। আর মুসলিম না হয়ে মৃত্যু বরণ কর না’ (আলে ইমরান ১০২)

উপরোক্ত আয়াত সমূহ থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহকে যথার্থরূপে ভয় করতে হবে। আর তাঁকে যে ভয় করবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন, তার রিযিকের ব্যবস্থা করবেন এবং তাকে মর্যাদা দান করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে সেই আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ- ‘আর যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সামনে দন্ডায়মান হতে ভয় করে, তার জন্য রয়েছে দু’টি জান্নাত’ (আর-রহমান ৪৬)

তাক্বওয়া মুমিনের একমাত্র সম্বল। যা মানুষকে সম্মানিত করে। তাক্বওয়াশীলদেরকেই আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ছাঃ) সবচেয়ে সম্মানিত বলেছেন। আল্লাহ অন্যত্র বলেন,

يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوْبًا وَّقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوْا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ-

‘হে মানুষ সকল! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী হতে সৃষ্টি করেছি। তারপর আমি তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত করেছি যেন তোমরা পরস্পরকে চিনতে পার। নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানি সে, যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী পরহেযগার। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং সব বিষয়ে অবহিত’ (হুজুরাত ১৩)। এখানে আল্লাহ তা‘আলা পরহেযগার মানুষকেই সবচেয়ে বড় সম্মানিত মানুষ বলে উল্লেখ করেছেন। অত্র আয়াতে একথাও বলা হয়েছে যে, বংশ মর্যাদা সম্মানিত হওয়ার মাধ্যম নয় এবং নারী বা পুরুষ হয়ে জন্ম নেয়াও সম্মানিত হওয়ার মাধ্যম নয়। মানুষ কেবল তাকওয়ার ভিত্তিতে ইহাকাল ও পরকালে সম্মান লাভ করতে পারে।

আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেন, فَاتَّقُوا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ ‘তোমরা আল্লাহকে যথা সম্ভব ভয় কর’ (তাগাবুন ১৬)। অত্র আয়াতে আল্লাহ মানুষকে তার সাধ্য অনুযায়ী পরহেযগারিতা অবলম্বন করার জন্য আদেশ করেছেন।

অন্যত্র তিনি আরো বলেন, يَأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلاً سَدِيْدًا ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল’ (আহযাব ৭০)। এ আয়াতে আল্লাহ মানুষকে পরহেযগারিতা অবলম্বন করতে বলেন এবং সত্য কথা বলতে আদেশ করেন।

অপর এক আয়াতে পরহেযগারিতা অবলম্বনের উপকারিতা তুলে ধরে আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِنْ تَتَّقُوا اللهَ يَجْعَلْ لَكُمْ فُرْقَانًا وَيُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيْمِ- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় করে চল, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভাল-মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার মানদন্ড দান করবেন। তোমাদের পাপ মিটিয়ে দিবেন। আর তোমাদের ক্ষমা করে দিবেন। কারণ আল্লাহ বড় অনুগ্রহশীল’ (আনফাল ২৯)

অত্র আয়াতে চারটি জিনিসের কথা বলেছেন- (১) পরহেযগার হতে বলেছেন (২) বিনিময়ে আল্লাহ মানদন্ড দিবেন (৩) পাপ মিটিয়ে দিবেন (৪) ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহভীতি বা তাকওয়া মানুষকে ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করে চলার মানসিকতা তৈরী করে দেয়। আর তাকওয়া মানুষের জীবিকার গ্যারান্টি হতে পারে।

মানুষ তার বংশ মর্যাদা দ্বারা সম্মান লাভ করতে পারে না। কেবল তাক্বওয়া দ্বারা ইয্যত-সম্মান লাভ করতে পারে।

আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يَتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا ‘যে লোক আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার কাজ সহজ ও সুবিধাজনক করে দেন’ (তালাক্ব ৪)। অত্র আয়াতে আল্লাহ বলেন, যারা পরহেযগারিতা অবলম্বন করে আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন। আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يَتَّقِ اللهَ يُكَفِّرْ عَنْهُ سَيِّئَاتِهِ وَيُعْظِمْ لَهُ أَجْرًا ‘যে লোক পরহেযগারিতা অবলম্বন করে আল্লাহ তার পাপ মিটিয়ে দেন এবং তাকে বড় প্রতিদান প্রদান করেন’ (তালাক্ব ৫)। অত্র আয়াতে তাকওয়া অবলম্বন করার দু’টি বড় ফলাফলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। (১) তাকওয়ার ভিত্তিতে আল্লাহ মানুষের পাপ মিটিয়ে দেন। (২) আল্লাহ তাকওয়া অবলম্বনকারীকে বড় প্রতিদান দেন। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, وَتَزَوَّدُوْا فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَى وَاتَّقُوْنِ يَا أُوْلِي الْأَلْبَابِ- ‘আর তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কর। আর নিঃসন্দেহে সবচেয়ে উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া। হে জ্ঞানী মানুষ! তোমরা আমাকে ভয় কর’ (বাক্বারাহ ১৯৭)। অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তাক্বওয়াকে সবচেয়ে উত্তম পাথেয় বলেছেন। আর আল্লাহ জ্ঞানী ব্যক্তিকে সম্বোধন করে বলেন, তোমরা আমার ব্যাপারে তাক্বওয়া অবলম্বন কর। অন্যত্র তিনি বলেন, وَاعْلَمُوْا أَنَّ اللهَ مَعَ الْمُتَّقِيْنَ ‘আর জেনে রেখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাক্বওয়াশীল মানুষের সাথে থাকেন’ (বাক্বারাহ ১৯৪)। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, فَإِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِيْنَ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাকওয়াশীল ব্যক্তিদের ভালবাসেন’ (আলে ইমরান ৭৬)। উপরোক্ত আয়াত সমূহ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, সুখে-শান্তিতে ও নিরাপদে জীবন যাপন করার জন্য তাকওয়াই হচ্ছে বড় মাধ্যম।

এ মর্মে হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قِيلَ يَا رَسُولَ اللهِ مَنْ أَكْرَمُ النَّاسِ قَالَ أَتْقَاهُمْ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হল, মানুষের মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদাবান ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, যে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে আল্লাহভীরু’ (বুখারী, মুসলিম, রিয়াযুছ ছালেহীন হা/৬৯)

এজন্য রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ بَطَّأَ بِهِ عَمَلُهُ لَمْ يُسْرِعْ بِهِ نَسَبُهُ ‘যার কর্ম তাকে পিছে সরিয়েছে, তার বংশ মর্যাদা তাকে আগে বাড়াতে পারবে না’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২০৪)

নবী কারীম (ছাঃ) যুদ্ধের প্রধান সেনাপতিকে তাকওয়াশীল হওয়ার জন্য আদেশ করতেন-

عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ بُرَيْدَةَ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَمَّرَ أَمِيْرًا عَلَى جَيْشٍ أَوْ سَرِيَّةٍ أَوْصَاهُ فِيْ خَاصَّتِهِ بِتَقْوَى اللهِ وَمَنْ مَعَهُ مِنْ الْمُسْلِمِيْنَ خَيْرًا-

সুলায়মান ইবনে বুরায়দা (রাঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন তার পিতা বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন কোন সৈন্যদলের আমীর নির্ধারণ করতেন, তখন তাকে বিশেষভাবে আল্লাহকে ভয় করার তথা তাক্বওয়া অবলম্বন করার জন্য আদেশ করতেন। আর সাধারণ মুসলিম যোদ্ধাদেরকে কল্যাণের উপদেশ দিতেন’ (মুসলিম, বুলূগুল মারাম হা/১২৬৮)

তাক্বওয়া - ২

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মু‘আয ইবনে জাবাল (রাঃ)-কে তাক্বওয়াশীল হওয়ার জন্য বলেন। হাদীছে এসেছে,

عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ لَمَّا بَعَثَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى الْيَمَنِ خَرَجَ مَعَهُ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُوْصِيْهِ وَمُعَاذٌ رَاكِبٌ وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمْشِيْ تَحْتَ رَاحِلَتِهِ فَلَمَّا فَرَغَ قَالَ يَا مُعَاذُ إِنَّكَ عَسَى أَنْ لاَ تَلْقَانِيْ بَعْدَ عَامِيْ هَذَا أَوْ لَعَلَّكَ أَنْ تَمُرَّ بِمَسْجِدِيْ أَوْ قَبْرِيْ فَبَكَى مُعَاذٌ جَشَعًا لِفِرَاقِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ الْتَفَتَ فَأَقْبَلَ بِوَجْهِهِ نَحْوَ الْمَدِيْنَةِ فَقَالَ إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِي الْمُتَّقُوْنَ مَنْ كَانُوْا وَحَيْثُ كَانُوْا-

মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) বলেন, যখন রাসূল (ছাঃ) তাকে ইয়ামান পাঠান, তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে উপদেশ দেয়ার জন্য তার সাথে বের হলেন। মু‘আয সওয়ারীর উপরে আরোহন করেছিলেন এবং নবী করীম (ছাঃ) সওয়ারীর নীচে চলতেছিলেন। তিনি উপদেশ শেষে বললেন, মু‘আয! সম্ভবত এ বছরের পর তোমার সাথে আমার আর সাক্ষাৎ হবে না। তুমি আমার মসজিদ ও কবরের পাশ দিয়ে পার হয়ে যাবে। মু‘আয (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ)-এর বিচ্ছিন্নতায় চিৎকার করে কাঁদতে লাগলেন এবং মদীনার দিকে ফিরে দেখলেন। তারপর নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তাক্বওয়াশীল ব্যক্তিরাই সবচেয়ে আমার নিকটে। তারা যেই হোক না কেন, যেখানেই হোক না কেন’? (ছহীহ ইবনে হিববান হা/৬৪৬)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, নবী করীম (ছাঃ) মু‘আয ইবনে জাবালকে অনেক উপদেশ দিয়েছিলেন। তার প্রতি শেষ উপদেশ ছিল পরহেযগার হওয়ার। তিনি পরহেযগার ব্যক্তিকে তাঁর সবচেয়ে নিকটে বলেছেন।

রাসূল (ছঃ) তাঁর মেয়ে ফাতিমা (রাঃ)-কে তাক্বওয়ার উপদেশ দেন। এমর্মে বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كُنَّ أَزْوَاجَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَهُ لَمْ يُغَادِرْ مِنْهُنَّ وَاحِدَةً فَأَقْبَلَتْ فَاطِمَةُ تَمْشِيْ مَا تُخْطِئُ مِشْيَتُهَا مِنْ مِشْيَةِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا فَلَمَّا رَآهَا رَحَّبَ بِهَا فَقَالَ مَرْحَبًا بِابْنَتِي ثُمَّ أَجْلَسَهَا عَنْ يَمِينِهِ أَوْ عَنْ شِمَالِهِ ثُمَّ سَارَّهَا فَبَكَتْ بُكَاءً شَدِيدًا فَلَمَّا رَأَى جَزَعَهَا سَارَّهَا الثَّانِيَةَ فَضَحِكَتْ فَقُلْتُ لَهَا خَصَّكِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ بَيْنِ نِسَائِهِ بِالسِّرَارِ ثُمَّ أَنْتِ تَبْكِيْنَ فَلَمَّا قَامَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَأَلْتُهَا مَا قَالَ لَكِ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَتْ مَا كُنْتُ أُفْشِي عَلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سِرَّهُ قَالَتْ فَلَمَّا تُوُفِّيَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُلْتُ عَزَمْتُ عَلَيْكِ بِمَا لِي عَلَيْكِ مِنَ الْحَقِّ لَمَا حَدَّثْتِنِيْ مَا قَالَ لَكِ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ أَمَّا الْآنْ فَنَعَمْ أَمَّا حِيْنَ سَارَّنِيْ فِي الْمَرَّةِ الْأُوْلَى فَأَخْبَرَنِيْ أَنَّ جِبْرِيْلَ كَانَ يُعَارِضُهُ الْقُرْآنَ فِيْ كُلِّ سَنَةٍ مَرَّةً أَوْ مَرَّتَيْنِ وَإِنَّهُ عَارَضَهُ الْآنْ مَرَّتَيْنِ وَإِنِّيْ لاَ أُرَى الْأَجَلَ إِلاَّ قَدْ اقْتَرَبَ فَاتَّقِي اللهَ وَاصْبِرِيْ فَإِنَّهُ نِعْمَ السَّلَفُ أَنَا لَكِ قَالَتْ فَبَكَيْتُ بُكَائِي الَّذِيْ رَأَيْتِ فَلَمَّا رَأَى جَزَعِي سَارَّنِي الثَّانِيَةَ فَقَالَ يَا فَاطِمَةُ أَمَا تَرْضَيْ أَنْ تَكُونِي سَيِّدَةَ نِسَاءِ الْمُؤْمِنِيْنَ أَوْ سَيِّدَةَ نِسَاءِ هَذِهِ الْأُمَّةِ قَالَتْ فَضَحِكْتُ ضِحْكِي الَّذِيْ رَأَيْتِ-

আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সকল স্ত্রী একদা তাঁর নিকট ছিলাম। এ সময় ফাতিমা (রাঃ) আসলেন। তার চলার ভঙ্গি রাসূল (ছাঃ)-এর চলার ভঙ্গির সাথে স্পষ্ট মিল ছিল। যখন তিনি তাকে দেখলেন তখন বললেন, হে আমার কন্যা! তোমার আগমন মুবারক হোক। অতঃপর নবী করীম (ছাঃ) তাকে তাঁর ডানে অথবা বামে বসালেন। তারপর চুপে চুপে তাকে কিছু বললেন, এতে ফাতিমা ভীষণভাবে কাঁদতে লাগলেন। অতঃপর যখন তার অস্থিরতা দেখলেন, তিনি পুনরায় তার কানে চুপে চুপে কিছু বললেন, তখন ফাতিমা হেসে উঠলেন। আমি তাকে বললাম, রাসূল (ছাঃ) তাঁর স্ত্রীদের মাঝে তোমাকে খাছ করে চুপে চুপে কিছু বললেন, তুমি এতে কেঁদে উঠলে। অতঃপর ভীতিকর কান্না শুনে দ্বিতীয়বার তার সাথে চুপে চুপে কথা বললেন, তখন ফাতিমা হেসে উঠলেন। অতঃপর নবী করীম (ছাঃ) সেখান থেকে চলে গেলেন। আমি ফাতিমাকে বললাম, নবী করীম (ছাঃ) তোমাকে কি বললেন? ফাতিমা বলল, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর গোপন কথা ফাঁস করব না। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) যখন ইন্তেকাল করলেন। তারপর আমি ফাতিমাকে বললাম, তোমার উপর আমার যে অধিকার রয়েছে, তার প্রেক্ষিতে আমি তোমাকে কসম দিয়ে বলছি, রাসূল (ছাঃ) তোমাকে চুপে চুপে যা বলেছেন, তা আমাকে বল। ফাতিমা বলল, এখন সে কথাটি প্রকাশ করতে কোন আপত্তি নেই। প্রথম বার তিনি আমাকে চুপে চুপে বলেছিলেন, জিবরাঈল প্রতিবছর আমার সামনে কুরআন একবার পেশ করেন। কিন্তু এবার তিনি দু’বার পেশ করেছেন। এতে আমি মনে করছি আমার মরণের সময় নিকটে চলে এসেছে। অতএব ফাতিমা তুমি আল্লাহকে ভয় কর, পরহেযগার হও এবং ধৈর্য ধারণ কর। আমি তোমার জন্য উত্তম অগ্রযাত্রী। একথা শুনে আমি কাঁদতে লাগলাম। অতঃপর যখন তিনি আমার অস্থিরতা দেখলেন, তখন দ্বিতীয় বার আমাকে চুপে চুপে বললেন, ফাতিমা তুমি খুশী হবে না যে, তুমি মুমিন নারীদের সরদার অথবা এ উম্মতের নারীদের সরদার। তখন আমি হাসতে লাগলাম। যে হাসি আপনি দেখলেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮৭৮)। অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) ফাতিমা (রাঃ)-কে তাক্বওয়াশীল হওয়ার জন্য এবং বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করার জন্য আদেশ করেন।

ছাহাবীগণ উপদেশ চাইলে নবী করীম (ছাঃ) তাদেরকে তাক্বওয়াশীল হতে বলেন,

عَنِ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ فَوَعَظَنَا مَوْعِظَةً بَلِيغَةً ذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُونُ وَوَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوبُ فَقَالَ قَائِلٌ يَا رَسُولَ اللهِ كَأَنَّ هَذِهِ مَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ فَاَوْصِنَا فَقَالَ أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ كَانَ عَبْدًا حَبَشِيًّا فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّيْنَ تَمَسَّكُوْا بِهَا وَعَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ.

ইরবায ইবনে সারিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) আমাদের ছালাত আদায় করালেন। অতঃপর আমাদের দিকে মুখ করে আমাদের উদ্দেশ্যে এমন এক মর্মস্পর্শী নছীহত করলেন, যাতে চক্ষু সমূহ অশ্রু প্রবাহিত করল এবং অন্তর সমূহ ভীত-বিহক্ষল হল। এ সময়ে এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহর রাসূল! এ মনে হচ্ছে বিদায় গ্রহণের শেষ উপদেশ। আমাদের আরও কিছু উপদেশ দিন। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহকে ভয় করার, তাক্বওয়াশীল হওয়ার উপদেশ দিচ্ছি এবং নেতার কথা শুনতে ও তার আনুগত্য করতে উপদেশ দিচ্ছি, নেতা বা ইমাম হাবশী গোলাম হলেও। আমার পর তোমাদের মধ্যে যারা জীবিত থাকবে, তারা অল্প দিনের মধ্যেই অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাতকে এবং সৎপথ প্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরবে এবং তাকে শক্তভাবে ধরে থাকবে। অতএব সাবধান তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে কিতাব ও সুন্নাহর বাইরে নতুন কথা হতে বেঁচে থাকবে। কেননা প্রত্যেক নতুন কথাই বিদ‘আত এবং প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা’ (আবু দাউদ, মিশকাত হা/১৫৮)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, সকল উপদেশের মূল হচ্ছে তাক্বওয়াশীল হওয়ার উপদেশ প্রদান করা। তাক্বওয়া মানুষকে সকল প্রকার অপসন্দনীয় কথা ও কাজ হতে বিরত রাখতে পারে এবং তাক্বওয়া মানুষের সম্মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারে।

তাক্বওয়া - ৩

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللهَ لَا يَنْظُرُ إِلَى صُوَرِكُمْ وَأَمْوَالِكُمْ وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের বাহ্যিক আকৃতি ও সম্পদ দেখেন না; বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলের প্রতি তাকান’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৮৩)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لَا يَظْلِمُهُ وَلَا يَخْذُلُهُ وَلَا يَحْقِرُهُ التَّقْوَى هَاهُنَا وَيُشِيرُ إِلَى صَدْرِهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। কাজেই তার উপর অত্যাচার করবে না, তাকে লজ্জিত করবে না এবং তাকে তুচ্ছ মনে করবে না। আল্লাহর ভয় এখানে থাকে। একথা বলে তিনি তিনবার নিজের বক্ষের দিকে ইশারা করলেন’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৭৪২)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, পরহেযগারিতা মানুষের অন্তরের ব্যাপার। অন্তরে পরহেযগারিতা থাকলে কথা ও কাজে তা প্রকাশ পাবে। এজন্য নবী করীম (ছাঃ) তিনবার বুকের দিকে ইশারা করে বললেন, পরহেযগারিতা মানুষের বুকের মধ্যে রয়েছে। মন ভাল আছে, পরিষ্কার আছে এই দোহাই দিয়ে নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী একাকার হয়ে চলবে, অবাধে মেলামেশা করবে; পর্দা-পুশীদার ধার ধারবে না। এটা কোন মুসলিম সমাজের জন্য কাম্য নয়। বরং আল্লাহ প্রদত্ত পর্দার বিধান মেনে চলাই মন ভাল থাকার পরিচয়। যে মনে তাকওয়া থাকে, যে অন্তরে আল্লাহভীতি থাকে তাকেই ভাল মন ও ভাল অন্তর বলা যায়। এতদ্ব্যতীত কোন অন্তর ভাল অন্তর নয়।

عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَلَا وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلُحَتْ صَلُحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهُ أَلَا وَهِيَ الْقَلْبُ-

নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘মনে রেখ নিশ্চয়ই মানুষের শরীরে একটি গোশত পিন্ড আছে যা, সঠিক থাকলে সমগ্র দেহই সঠিক থাকে। আর তার বিকৃতি ঘটলে সমস্ত দেহেরই বিকৃতি ঘটে। সে গোশতের টুকরাটি হল অন্তর’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৬৪২)। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল অন্তর ঠিক থাকলে ব্যক্তি ঠিক থাকে। আর অন্তর খারাপ হলে ব্যক্তিও খারাপ হয়ে যায়। অর্থাৎ মানুষের পরহেযগারিতা নির্ভর করে মানুষের অন্তরের উপর। এখানে অন্তর ঠিক করার অর্থ হচ্ছে খালেছ অন্তরে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ভয় করা। আর যে অন্তর আল্লাহকে ভয় করে, তা গোপন-প্রকাশ্য সকল প্রকার পাপাচার হতে বিরত থাকে।

عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ فِيْ حَجَّةِ الْوَدَاعِ فَقَالَ اتَّقُوا اللهَ رَبَّكُمْ وَصَلُّوْا خَمْسَكُمْ وَصُوْمُوْا شَهْرَكُمْ وَأَدُّوْا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ وَأَطِيْعُوْا ذَا أَمْرِكُمْ تَدْخُلُوْا جَنَّةَ رَبِّكُمْ-

উমামা বাহেলী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বিদায় হজ্জের খুৎবা প্রদান করতে শুনেছি। তিনি বলছিলেন, ‘হে মানুষ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় কর, রামাযান মাসের ছিয়াম পালন কর, তোমাদের সম্পদের যাকাত প্রদান কর, তোমাদের নেতাদের আনুগত্য কর, তাহলে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের জান্নাতে প্রবেশ করবে’ (তিরমিযী হা/৬১৬; ইবুন হিববান হা/৭৯৫)। এ হাদীছে ৫টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। (১) আল্লাহকে ভয় করা (২) দিনে-রাতে ৫ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করা (৩) রামাযান মাসে ছিয়াম পালন করা (৪) সম্পদের যাকাত প্রদান করা (৫) নেতার আনুগত্য করা। আল্লাহকে ভয় করার অর্থ হচ্ছে তাঁর নির্দেশ প্রতিপালন করা এবং তাঁর নিষিদ্ধ বিষয়কে পরিহার করা। সুতরাং তাকওয়া অর্জনের পাশাপাশি ইসলামের মৌলিক ইবাদত সমূহ আদায় করা মানুষের পরহেযগারীতার প্রমাণ।

তাক্বওয়া - ৪

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قِيْلَ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّ النَّاسِ أَفْضَلُ قَالَ كُلُّ مَخْمُوْمِ الْقَلْبِ صَدُوْقِ اللِّسَانِ قَالُوْا صَدُوْقُ اللِّسَانِ نَعْرِفُهُ فَمَا مَخْمُوْمُ الْقَلْبِ قَالَ هُوَ التَّقِيُّ النَّقِيُّ لَا إِثْمَ فِيْهِ وَلَا بَغْيَ وَلَا غِلَّ وَلَا حَسَدَ-

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ)-কে বলা হল, সবচেয়ে উত্তম মানুষ কে? তিনি বললেন, প্রত্যেক মাখমূমুল ক্বালব এবং ছদূকুল লিসান। ছাহাবীগণ বললেন, আমরা জিহবার সত্যবাদিতা বুঝি কিন্তু মাখমূমুল কবালব বুঝি না। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, সে হচ্ছে এমন ব্যক্তি যে পরহেযগার এবং স্বচ্ছ। আর পরহেযগার এমন ব্যক্তি (১) যার মধ্যে পাপ নেই, (২) সীমালংঘন নেই (৩) খিয়ানত নেই (৪) হিংসা নেই’ (ইবনু মাজাহ হা/৪২১৬)

অত্র হাদীছে পরহেযগার হওয়ার চারটি গুণ বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথমতঃ যার মধ্যে পাপ নেই। অর্থাৎ কোন কারণে পাপ হলে তাড়াতাড়ি তওবা করে। দ্বিতীয়তঃ যার মধ্যে সীমলংঘন নেই। অর্থাৎ যে কোন ছোট বা বড় কাজে বাড়াবাড়ি করে না। তৃতীয়তঃ যার মধ্যে খিয়ানত নেই। অর্থাৎ যে কোন ব্যাপারে অর্থের বা দায়িত্বের ক্ষেত্রে খিয়ানত করে না। চতুর্থতঃ যার মধ্যে হিংসা নেই। অর্থাৎ যে কোন বিষয়ে যে কোন ব্যক্তির প্রতি হিংসা করে না।

عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ مُعَاذًا إِلَى الْيَمَنِ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَوْصِنِيْ قَالَ عَلَيْكَ بِتَقْوَى اللهِ مَا اسْتَطَعْتَ وَاذْكُرِ اللهَ عِنْدَ كُلِّ حَجَرٍ وَشَجَرٍ وَإِذَا عَمِلْتَ سَيِّئَةً فَأحْدُثْ عِنْدَهَا تَوْبَةَ السِّرِّ بِالسِّرِّ وَالْعَلاَنِيَةِ بِالْعَلاَنِيَةِ-

আতা ইবনে ইয়াসার (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) যখন মু‘আয (রাঃ)-কে ইয়ামান পাঠালেন, তখন মু‘আয বলেছিলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাকে কিছু উপদেশ দিন। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তোমার জন্য যথাসম্ভব তাক্বওয়া অবলম্বন করা যরূরী। আর আল্লাহকে স্মরণ কর প্রত্যেক পাথর ও গাছের নিকট। আর কোন পাপ কাজ করলে তার জন্য তওবা কর। পাপ প্রকাশ্যে হলে তওবা প্রকাশ্যে কর। পাপ গোপনে হলে তওবা গোপনে কর’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৩২০)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, মানুষকে সম্ভবপর পরহেযগারিতা অবলম্বন করতে হবে। সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে। পাপ হলেই তওবা করতে হবে। সামাজিক পাপ হলে সমাজে তওবা করতেই হবে এবং গোপনে পাপ হলে গোপনে তওবা করতে হবে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِرَجُلٍ أُوصِيْكَ بِتَقْوَى اللهِ وَالتَّكْبِيْرِ عَلَى كُلِّ شَرَفٍ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) একজন ব্যক্তিকে বললেন, আমি তোমাকে আল্লাহভীতি অবলম্বন করার আদেশ করছি। আর প্রত্যেক উঁচু স্থানে আল্লাহু আকবার বলার জন্য বলছি’ (ইবনু মাজাহ হা/২৭৭১, হাদীছ ছহীহ)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, মানুষের জন্য তাকওয়াশীল হওয়া এক যরূরী কর্তব্য এবং প্রত্যেক উঁচু স্থানে উঠলে ‘আল্লাহু আকবার’ বলতে হবে।

عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُوصِيْكَ بِتَقْوَى اللهِ، فَإِنَّهُ رَأْسُ كُلِّ شَىْءٍ، وَعَلَيْكَ بِالْجِهَادِ، فَإِنَّهُ رَهْبَانِيَّةُ الإِسْلاَمِ، وَعَلَيْكَ بِذِكْرِ اللهِ، وَتِلاَوَةِ الْقُرْآنِ، فَإِنَّهُ رَوْحُكَ فِى السَّمَاءِ، وَذِكْرُكَ فِى الأَرْضِ-

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, হে জাবের! আমি তোমাকে তাকওয়াশীল হওয়ার জন্য উপদেশ দিচ্ছি। নিশ্চয়ই তাক্বওয়াই হচ্ছে সব কিছুর কল্যাণের মূল। তোমার উপর জিহাদ যরূরী। কারণ জিহাদই হচ্ছে ইসলামের বৈরাগ্য। আল্লাহর যিকর কর এবং কুরআন তেলাওয়াত কর। কারণ এ দু’টি হচ্ছে আকাশে শান্তি লাভের মাধ্যম এবং যমীনে সুখ্যাতি অর্জনের মাধ্যম’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৫৫৫)। অত্র হাদীছে নবী করীম (ছাঃ) মানুষকে তাক্বওয়া অবলম্বন করার জন্য আদেশ করেন এবং বলেন, তাক্বওয়াই হচ্ছে সব কল্যাণের মূল। জিহাদ যরূরী, কারণ জিহাদই হচ্ছে ইসলামে বৈরাগ্য। আর কুরআন তেলাওয়াত ও যিকিরের পরিণাম হচ্ছে দুনিয়াতে সুনাম অর্জন করা এবং পরকালে জান্নাত অর্জন করা।

তাক্বওয়া - ৫

নবী করীম (ছাঃ) মানুষকে বিদায় দেওয়ার সময় বলতেন,

أَسْتَوْدِعُ اللهَ دِينَكَ وَأَمَانَتَكَ وآخِرَ عَمَلِكَ وَزَوَّدَكَ اللهُ التَّقْوَى وَغَفَرَ ذَنْبَكَ وَيَسَّرَ لَكَ الْخَيْرَ حَيْثُمَا كُنْتَ-

‘আমি তোমার দ্বীন, তোমার আমানত ও তোমার শেষ কর্মকে আল্লাহর নিকট গচ্ছিত রাখলাম। আল্লাহ তোমাকে পরহেযগারিতা দান করুন। আল্লাহ তোমার গোনাহ মাফ করুন এবং আল্লাহ তোমার জন্য কল্যাণকে সহজ করে দিন তুমি যেখানেই থাক’ (আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/২৩২৪)। এ হাদীছে বিদায় জানানোর সুন্নাতী তরীকা বর্ণিত হয়েছে। যা অনুসরণ করা প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য যরূরী। কিন্তু বর্তমানে মানুষ বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণে ওকে, টাটা, বাই, বাই ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে বিদায় নেয় ও অন্যকে বিদায় জানায়। এসব পরিহার করা অবশ্য কর্তব্য। এগুলির মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। বরং এসবের কারণে ক্বিয়ামতের মাঠে বিধর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أتَدْرُوْنَ مَا أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ الْجَنَّةَ فَقَالَ تَقْوَى اللهِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ، أتَدْرُوْنَ مَا أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ النَّارَ فَقَالَ الْفَمُ وَالْفَرْجُ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন তোমরা কি জান কোন জিনিস মানুষকে সবচেয়ে বেশী জান্নাতে প্রবেশ করায়? তা হচ্ছে আল্লাহর ভয় বা তাক্বওয়া ও উত্তম চরিত্র। তোমরা কি জান মানুষকে সবচেয়ে বেশী জাহান্নামে প্রবেশ করায় কোন জিনিস? একটি মুখমন্ডল ও অপরটি লজ্জাস্থান’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৬২১, হাদীছ ছহীহ)। অত্র হাদীছে আদর্শ পুরুষের চারটি গুণ তুলে ধরা হয়েছে। (১) তাকওয়া বা আল্লাহভীতি (২) উত্তম চরিত্র (৩) মুখ নিয়ন্ত্রণ (৪) লজ্জাস্থানের হেফাযত। এসব বিষয় কেউ অবলম্বন করতে পারলে সে আদর্শ মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে। তার দ্বারা দেশ ও সমাজ উপকৃত হবে। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সকলে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হলে এবং সবাই তাকওয়ার গুণে গুণান্বিত হলে তাদের দ্বারা অন্যরা নির্যাতিত হবে না। সবাই শান্তি-নিরাপত্তা লাভ করবে এবং তাক্বওয়াশীল ব্যক্তি হবে জান্নাতী।

عَنِ الْحَسَنِ عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْحَسَبُ الْمَالُ وَالْكَرَمُ التَّقْوَى-

হাসান বাছারী সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘মান-মর্যাদা হল ধন-সম্পদ। আর ভদ্রতা-নম্রতা হল তাক্বওয়া অবলম্বন করা’ (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪৬৪৮)। মানুষ কিভাবে ভদ্র-নম্র হতে পারে এ হাদীছে তার স্পষ্ট বিবরণ পেশ করা হয়েছে। পরহেযগারিতা ছাড়া মানুষ ভদ্র হতে পারে না। আর পরহেযগার মানুষ ছাড়া অন্য কাউকে ভদ্র বলা যায় না। মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ দেখে তাকে বিচার করা যায় না। প্রকৃত পক্ষে তাকওয়াই মানুষকে শালীন-ভদ্র করে গড়ে তোলে।

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ أَنْسَابَكُمْ هَذِهِ لَيْسَتْ بِمُسَّبَةٍٍ عَلَى أَحَدٍ كُلُّكُمْ بَنِيْ آدَمَ طَفُّ الصَّاعِ بِالصَّاعِ لَمْ تَمْلَئُوهُ لَيْسَ لِأَحَدٍ فَضْلٌ إِلَّا بِالدِّينِ وَالتَّقْوَى كَفَى بِالرَّجُلِ أَنْ يَكُونَ بَذِيًّا فَاحِشًا بَخِيلاً-

উক্ববা ইবনু আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের বংশ পরিচয় এমন কোন বস্ত্ত নয় যে, তার কারণে তোমরা অন্যকে গালমন্দ করবে। তোমরা সকলেই আদমের সন্তান। দাড়িপাল্লার উভয় দিক যেমন সমান থাকে, যখন তোমরা পূর্ণ করনি। দ্বীন ও তাক্বওয়া ছাড়া একজনের উপর আর একজনের কোন মর্যাদা নেই। তবে কোন ব্যক্তির মন্দ হওয়ার জন্য অশ্লীল বাকচারী ও কৃপণ হওয়াই যথেষ্ট’ (আহমাদ, মিশকাত হা/৪৬৯৩)। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, বংশের নিন্দা করা যাবে না। আর পাল্লার উভয় দিক যেমন সমান, তেমনি আদম সন্তান হিসাবে সকল বংশের মানুষই সমান। সুতরাং একমাত্র তাক্বওয়াই হল উচু-নীচু মান নির্ধারণের মাধ্যম। এ হাদীছে উল্লেখিত দু’টি দোষ মানুষের অভদ্র হওয়ার মাধ্যম। (১) অশ্লীল বাকচারী (২) কৃপণ। যাকে তাকে যখন তখন যথেচ্ছা গালিগালাজ করা, অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করা অভদ্রতা। এগুলি পরিহার করা যেমন প্রত্যেক মুমিনের জন্য অবশ্য কর্তব্য, তেমনি কৃপণতা ত্যাগ করা অবশ্য কর্তব্য।

তাক্বওয়া - ৬

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لاَ تُصَاحِبْ إِلاَّ مُؤْمِنًا وَلاَ يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلاَّ تَقِيٌّ-

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি নবী করীম (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, ‘ঈমানদার ছাড়া কাউকে সাথী কর না। আর পরহেযগার ব্যতীত কেউ যেন তোমার খাদ্য না খায়’ (তিরমিযী, আবু দাউদ, মিশকাত হা/৪৭৯৮)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, ঈমানদার ব্যক্তি ছাড়া কাউকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না। আর পরহেযগার ব্যক্তি ছাড়া অন্য কাউকে স্বেচ্ছায় খাদ্য দেয়া যাবে না। তবে পরহেযগার ছাড়া কেউ যদি চায় তাহলে তাকে সাধ্যমত দান করতে হবে। আল্লাহর বাণী, ‘আপনি সায়েলকে ধমক দিবেন না’ (যুহা ১০)

عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ قَالَ قَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اتَّقِ اللهَ حَيْثُمَا كُنْتَ وَأَتْبِعْ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا-

আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে বলেছেন, ‘তুমি যেখানে যেভাবে থাকবে আল্লাহকে ভয় করবে বা তাক্বওয়া অবলম্বন করবে। কোন কারণ বশত পাপ কাজ হয়ে গেলে তারপর ভাল কাজ করবে। তা তোমার পাপকে মিটিয়ে দিবে’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫০৮৩)

অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, মানুষ যেখানে যেভাবেই থাকবে সেখানে সে অবস্থাতেই পরহেযগারিতা অবলম্বন করবে। আর যে কোন অপসন্দনীয় কথা ও কাজের পর পুণ্য লাভের চেষ্টা করতে হবে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " ثَلَاثٌ مُنْجِيَاتٌ وَثَلَاثٌ مُهْلِكَاتٌ فَأَمَّا الْمُنْجِيَاتُ: فَتَقْوَى اللهِ فِي السِّرِّ والعلانيةِ والقولُ بِالْحَقِّ فِي الرِّضَى وَالسَّخَطِ وَالْقَصْدُ فِي الْغِنَى وَالْفَقْرِ. وَأَمَّا الْمُهْلِكَاتُ: فَهَوًى مُتَّبَعٌ وَشُحٌّ مُطَاعٌ وَإِعْجَابُ الْمَرْءِ بِنَفْسِهِ وَهِيَ أَشَدُّهُنَّ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তিনটি কাজ মানুষকে রক্ষা করে এবং তিনটি কাজ মানুষকে ধ্বংস করে। রক্ষাকারী কাজ তিনটি হচ্ছে- (১) প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহকে ভয় করা (২) সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টিতে হক কথা বলা এবং (৩) সচ্ছলতায় ও অসচ্ছলতায় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা। আর ধ্বংসকারী কাজ তিনটি হচ্ছে- (১) প্রবৃত্তির অনুসরণ করা (২) কৃপণতাকে মেনে নেওয়া এবং (৩) আত্ম-অহংকার করা। আর এটিই হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন (বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৫১২২)

يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ رَبَّكُمْ وَاحِدٌ، وَإِنَّ أَبَاكُمْ وَاحِدٌ، أَلَا لَا فَضْلَ لِعَرَبِيٍّ عَلَى عَجَمِيٍّ، وَلَا لِعَجَمِيٍّ عَلَى عَرَبِيٍّ، وَلَا لِأَحْمَرَ عَلَى أَسْوَدَ، وَلَا أَسْوَدَ عَلَى أَحْمَرَ، إِلَّا بِالتَّقْوَى، إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَتْقَاكُمْ، أَلَا هَلْ بَلَّغْتُ؟ قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: فَلْيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ.

হে মানুষ! নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক একজন এবং তোমাদের পিতা একজন। মনে রেখো, আরাবীদের কোন সম্মান নেই আজামীদের উপর এবং আজামীদের কোন সম্মান নেই আরাবীদের উপর। লাল রংয়ের লোকের কোন সম্মান নেই কালো রংয়ের লোকের উপর এবং কালো রংয়ের লোকের কোন সম্মান নেই লাল রংয়ের লোকের উপর। তবে তাক্বওয়াই হচ্ছে মর্যাদার মাধ্যম। নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদার অধিকারী সেই, যে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে তাক্বওয়াশীল (সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭০০)

عَنْ عَبْدِ اللهِ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى-

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলতেন, হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট সহজ-সরল সঠিক পথ চাই। তোমার নিকট পরহেযগারিতা চাই। হারাম হতে বেঁচে থাকতে চাই এবং অন্যের নিকট মুখাপেক্ষী হওয়া হতে বেঁচে থাকতে চাই’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৭০)। অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল নবী করীম (ছাঃ) সর্বদা আল্লাহর নিকট পরহেযগারিতা চাইতেন।

আল্লাহ ভরসা - ১

তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা মুমিনের অন্যতম গুণও বটে। এ মর্মে আল্লাহ বলেন, إِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ إِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيْمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ- ‘মুমিনতো তারাই যাদের হৃদয় কম্পিত হয়, যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয় এবং তাঁর আয়াত তাদের নিকট তেলাওয়াত করা হয়, তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপরেই নির্ভর করে’ (আনফাল ২)। তিনি আরো বলেন, الَّذِينَ آمَنُوْا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ ‘যারা ঈমান আনে ও তাদের প্রতিপালকেরই উপর নির্ভর করে’ (নাহল ৯৯; শূরা ৩৬)

অন্যত্র আল্লাহ আরো বলেন, الَّذِيْنَ صَبَرُوْا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ ‘যারা ধৈর্য ধারণ করে এবং তাদের প্রতিপালকের উপর নির্ভর করে’ (নাহল ৪২; আনকাবূত ৫৯)। অন্য আয়াতে তিনি আরো বলেন, وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ- ‘মুমিনদের জন্য আল্লাহর উপর ভরসা করা উচিৎ’ (ইবরাহীম ১১)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ- ‘যখন তুমি কোন কাজের সিদ্ধান্ত কর, তখন আল্লাহর উপর ভরসা কর’ (আলে ইমরান ১৫৯)। তিনি আরো বলেন, وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ فَهُوَ حَسْبُهُ- ‘যে আল্লাহর উপর ভরসা করে আললাহই তার জন্য যথেষ্ট’ (তালাক্ব ৩)। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, وَمَا تَوْفِيقِي إِلَّا بِاللهِ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيبُ ‘আল্লাহ ছাড়া আমার কোন ক্ষমতা নেই। আমি তার উপর ভরসা রাখি, আমি তার নিকট ফিরে যাব (হূদ ৮৮)

উপরোক্ত আয়াত সমূহ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আল্লাহর উপর নির্ভর করা। ইবাদত-বন্দেগী, তাসবীহ-তাহলীল, যিকর-আযকার ইত্যাদির পাশাপাশি ধৈর্য ধারণ করে হালাল-হারাম বেছে চলা আবশ্যক। সেই সাথে পাপকাজ থেকে বেঁচে থেকে তাক্বওয়া ও তাওয়াক্কুল অবলম্বন করতে হবে। অন্তরে আল্লাহভীতি না থাকলে মানুষ যে কোন পাপে লিপ্ত হতে পারে। অপরপক্ষে তাওয়াক্কুল মানুষকে অন্যায় পন্থায় অর্থ উপার্জনের প্রচেষ্টা থেকে বিরত রাখে এবং মানুষকে অনেক বিপদাপদ থেকে রক্ষা করে।

আবু বকর ছিদ্দীক (রাঃ)-কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللهَ مَعَنَا ‘আপনি চিন্তা করবেন না, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের সাথে রয়েছেন’ (তওবা ৪০)। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, فَلَمَّا تَرَاءَى الْجَمْعَانِ قَالَ أَصْحَابُ مُوسَى إِنَّا لَمُدْرَكُونَ، قَالَ كَلَّا إِنَّ مَعِيَ رَبِّي سَيَهْدِينِ، فَأَوْحَيْنَا إِلَى مُوسَى أَنِ اضْرِبْ بِعَصَاكَ الْبَحْرَ فَانْفَلَقَ فَكَانَ كُلُّ فِرْقٍ كَالطَّوْدِ الْعَظِيمِ ‘তারপর উভয় দল যখন মুখোমুখী হল, তখন মূসার সাথীরা চিৎকার করে বলে উঠল, আমরাতো বন্দী হয়ে গেলাম। মূসা (আঃ) বললেন, কখনো নয়, নিশ্চয়ই আমার সাথে রয়েছেন, আমার প্রতিপালক। তিনি আমাকে পথ দেখাবেন। তখন আল্লাহ বলেন, আমি মূসাকে অহি-র মাধ্যমে বললাম, সাগরের উপর আপনার লাঠি মারুন। সহসা সাগর বিদীর্ণ হল এবং তার প্রতি অংশ এক একটি বিরাট পাহাড়ের আকার ধারণ করল’ (শু‘আরা ৬১-৬৩)। এ আয়াতে বাহ্যিকভাবে তাঁদের বাঁচার কোন পথ ছিল না। কারণ ডানে-বামে পিছনে শত্রুদল। আর সামনে সাগর। এরপরেও মূসা (আঃ) আল্লাহর উপর দৃঢ় ভরসা রেখে বলছেন, কখনো নয়, অসম্ভব হতেই পারে না। ফেরাউন আমাকে ধরতে পারবে না। কারণ নিশ্চয়ই আমার সাথে আমার প্রতিপালক রয়েছেন। তিনি আমাকে বাঁচার পথ দেখাবেন। পবিত্র কুরআনে এসেছে,رَبِّ ابْنِ لِي عِنْدَكَ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ وَنَجِّنِي مِنْ فِرْعَوْنَ وَعَمَلِهِ وَنَجِّنِي مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ ‘ফেরাউনের স্ত্রী (আছীয়া) বলেন, হে আমার প্রতিপালক! আমার জন্য তোমার জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ কর এবং আমাকে ফেরাউন ও তার কর্ম হতে রক্ষা কর। আর অত্যাচারী লোকদের কবল হতে আমাকে বাঁচাও’ (তাহরীম ১১)

আল্লাহর উপর তার ভরসা কেমন ছিল এবং তার ঈমানী দৃঢ়তা কতটা মযবুত ছিল, তা এ ঘটনা থেকে সহজেই অনুমেয়। তিনি পৃথিবীতে থেকেই জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নির্মাণের জন্য আল্লাহর নিকট জোরাল দাবী জানান।

জিবরাঈল (আঃ) যখন মানুষের রূপ ধরে মারিয়ামের কাছে প্রবেশ করলেন, তখন মারিয়াম বললেন, قَالَتْ إِنِّي أَعُوذُ بِالرَّحْمَنِ مِنْكَ إِنْ كُنْتَ تَقِيًّا নিশ্চয়ই আমি রহমানের নিকট তোমার থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। যদি তুমি পরহেজগার হও’ (মারিয়াম ১৮)। এ আয়াতটি মারিয়ামের আল্লাহর উপর ভরসার প্রমাণ বহন করে। তিনি নিজেকে রহমানের সাহায্যে বাঁচাতে চাইলেন।

ইউসুফ (আঃ)-এর ঘটনা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, وَغَلَّقَتِ الْأَبْوَابَ وَقَالَتْ هَيْتَ لَكَ قَالَ مَعَاذَ اللهِ إِنَّهُ رَبِّي أَحْسَنَ مَثْوَايَ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ ‘একদা সে ঘরের দরজা বন্ধ করে বলল, এবার তুমি আস। ইউসুফ বললেন, আমি আল্লাহর নিকট এমন কাজ হতে আশ্রয় চাই। নিশ্চয়ই তিনি আমার মালিক, তিনি আমার উত্তম ব্যবস্থা করেছেন। নিশ্চয়ই অপরাধীরা সফল হয় না’ (ইউসুফ ২৩)। এ আয়াত ইউসুফ (আঃ)-এর ঈমানী দৃঢ়তা ও আল্লাহর প্রতি তার নির্ভরতার প্রমাণ।

আল্লাহ ভরসা - ২

Comments

|| Popular Posts ||

Sura al imran Chapter___ 3_ Tafser

Bilqis(Queen of Sheba): Tafseer of Ibn katheer : Qur'anic Story

Eid e Milad bidah | Ruling On Celebrating The Birthday Of Prophet Muhammad

Dua for Relief Distress, Laziness, Debts :

female Islamic baby name

Chapter___ MUSLIMS ARE FUNDAMENTALISTS AND TERRORISTS: Islamic knowledge

গর্ভাবস্থায় বমি :

Hadith on Shukr: Take advantage of five blessings before deprived

তামাত্তু হজ্জ : Hajj e tamattu bangla