মৃত্যুর সময় যে আপসোস রয়ে যাবে! :

মৃত্যুর সময় যে আপসোস রয়ে যাবে!

post title will place here

মানুষের সামনে যখন মৃত্যু এসে হাযির হবে, যখন মালাকুল মাউত তার জান ক্ববয করার প্রস্তুতি নিবেন, তখন সে কী নিয়ে আপসোস করবে, জানেন? মৃত্যুর মতো কঠিন মুহূর্তে তার আপসোসের বিষয় হবে দান-ছাদাক্বা। ঠিক এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,وَأَنْفِقُوا مِنْ مَا رَزَقْنَاكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُولَ رَبِّ لَوْلَا أَخَّرْتَنِي إِلَى أَجَلٍ قَرِيبٍ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُنْ مِنَ الصَّالِحِينَ ‘আর আমি তোমাদেরকে যে রিযিক্ব দিয়েছি, তোমরা তা থেকে ব্যয় করবে তোমাদের কারও মৃত্যু আসার আগে আগেই। (অন্যথা মৃত্যু আসলে সে বলবে,) হে আমার রব! আমাকে আরো কিছু সময়ের জন্য সুযোগ দিলে আমি দান-ছাদাক্বা করতাম এবং নেককারদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম!’ (আল-মুনাফিকূন, ৬৩/১০)। বান্দার এই আক্ষেপের প্রেক্ষিতে আল্লাহ বলছেন,وَلَنْ يُؤَخِّرَ اللَّهُ نَفْسًا إِذَا جَاءَ أَجَلُهَا وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ ‘যখন কারো নির্ধারিত সময় উপস্থিত হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ তাকে কিছুতেই অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা আমল করো, আল্লাহ সে সম্বন্ধে ভালোভাবে অবহিত রয়েছেন’ (আল-মুনাফিকূন, ৬৩/১১)

যে টাকা-পয়সা কমে যাওয়ার ভয় আপনাকে আজকের দিনগুলোতে দান করা থেকে বিরত রাখছে, সেই টাকা-পয়সা আপনার মৃত্যুর সময় আফসোসের কারণ হবে— তা কি ভাবাচ্ছে আপনাকে? স্থির মনে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন তো, আপনি কি চান মৃত্যুর সময় দান-ছাদাক্বার বিষয় আপনার আফসোসের কারণ হোক? আপনি অবশ্যই সেটা চান না। আর সেটা দান করেই নিজের কাছে প্রমাণ করুন, নিজের হাত গর্দানের সাথে বেঁধে রেখে নয়। একজন ঈমানদারের জীবদ্দশায় দান-ছাদাক্বার আমলকে কতটা বেশি গুরুত্ব দেওয়ার দাবি রাখে, তা মৃত্যুর সময় এত এত বিষয় থাকতে দান-ছাদাক্বাকেন্দ্রিক আফসোসের কথা আল্লাহর জানিয়ে দেওয়া থেকেই দিবালোকের মতো স্পষ্ট।

একবার এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন ছাদাক্বায় সর্বাধিক ছওয়াব পাওয়া যায়? তিনি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘যে ছাদাক্বা সুস্থ অবস্থায় এবং ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ করে অর্থ ব্যয় করে ফেললে নিজেই দরিদ্র হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকা অবস্থায় করা হয়’। তিনি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বললেন, ‘আল্লাহর পথে ব্যয় করাকে সেই সময় পর্যন্ত দেরি করো না, যখন আত্মা তোমার কণ্ঠনালিতে এসে যায় এবং তুমি মরতে থাকো আর বলো, এই পরিমাণ অর্থ অমুককে দিয়ে দাও, এই পরিমাণ অর্থ অমুক কাজে ব্যয় করো’।[1]

[২]

দানের ব্যাপারে কুরআন-হাদীছে এত এত মোটিভেশন দেওয়া হয়েছে যে, কোনো মুসলিমের দানের আমলের ব্যাপারে উদাসীন থাকার কথা নয়। দান করলে মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়। হাদীছের ভাষ্যমতে, ‘দান করলে আল্লাহর ক্রোধ থেকেও বাঁচা যায়’।[2] ‘দান-ছাদাক্বা বিপদাপদের ঢাল হিসেবে কাজ করে’।[3] ফলে দানের গুরুত্ব অপরিসীম।

আল্লাহ তাআলা দানের ব্যাপারে মোটিভেশন দিয়ে দানের পুরস্কারের বিশালতা বোঝাতে চমৎকার এক উপমা দিয়ে বলেছেন,مَثَلُ الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহ তাআলার পথে খরচ করে, তাদের উদাহরণ হচ্ছে কোনো একটি বীজের মতো, যে বীজটি বপন করার পর তা থেকে একে একে সাতটি শিষ বের হলো আবার এর প্রতিটি শিষে রয়েছে ১০০ করে শস্যদানা; আসলে আল্লাহ তাআলা যাকে চান তাকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেন; আল্লাহ তাআলা অনেক প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ’ (আল-বাক্বারা২/২৬১)

প্রতিটি শিষে ১০০ করে শস্যদানা থাকলে সাতটি শিষে ৭০০ শস্যদানা থাকবে। চিন্তা করছেন কি, কত বিশাল পরিমাণ? সুবহানাল্লাহ! কেবল এতটুকুতেই তো শেষ নয়; আল্লাহ তাঁর বান্দাকে জানিয়ে রেখেছেন, যে বান্দা তাঁর অনুগত থাকবে, তাঁর প্রিয় বান্দায় পরিণত হতে পারবে, তাকে বরং বহুগুণে পুরস্কার দান করবেন। দানের ব্যাপারে এর চেয়ে বড় মোটিভেশন আর কী হতে পারে, ভাবুন তো? এরপরও কি আমরা দানের ক্ষেত্রে নিজেদেরকে পিছিয়ে রাখব? অন্তরে কৃপণতার ঠাঁই দেব?

উপর্যুক্ত আয়াতের শেষাংশে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর অন্যতম দুটি গুণ স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ। অর্থাৎ বান্দাকে দেওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে যে অসংখ্য অগণিত নেয়ামত রয়েছে, তা তাঁর ‘প্রাচুর্যময়’ গুণ উল্লেখ করিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন; যেন তাঁর বান্দা বুঝতে পারে যে, বান্দাকে বড় পরিসরে প্রতিদান দেওয়ার জন্য তাঁর মা‘বূদ অভাবী নন। তার রবের কাছে এত বেশি পরিমাণ রয়েছে, যা কোনোদিন দিয়ে শেষ করার নয়। অপরদিকে, ‘সর্বজ্ঞ’ গুণ দ্বারা বুঝিয়েছেন যে, তিনি তাঁর বান্দার নিয়্যত ও প্রয়োজনের বিষয়াদিসহ সকল বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত রয়েছেন। এছাড়া, বান্দা কোন অবস্থায় আছে, সেটা মুখ দিয়ে বলার আগেই তিনি তার সকল খবর জানেন। সুতরাং বান্দার টেনশনের কোনো কারণ নেই। বান্দা কেবল সঠিক পথে থাকলেই হলো। দানের মতো সকল ইবাদতে মনোযোগী হলেই হলো।

খুবই দুঃখজনকভাবে, আমরা অনেকেই একদিকে দান করি আবার অন্যদিকে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করে বেড়াই যে, আমি অমুককে, অমুক মাসজিদে কিংবা অমুক প্রতিষ্ঠানে এত এত টাকা দান করেছি। এগুলো কোনো মানুষকে শুনিয়ে কী লাভ যদি আপনি কেবলই আপনার রবের জন্য দান করে থাকেন, আখেরাতে পুরস্কৃত হওয়ার আশায় করে থাকেন? সে দানের তো কোনো মানেই হয় না, যে দান আল্লাহর সন্তুষ্টিকে কেন্দ্র করে করা হয় না, যে দানের উদ্দেশ্যই থাকে লোক দেখানো কিংবা দানশীল বলে লোকমুখে পরিচিতি লাভ করা।

দেখুন, ক্বিয়ামতের কঠিন দিন যেদিন পিতা-মাতা তার সন্তানকে চিনবে না, সন্তান তার পিতা-মাতাকে চিনবে না, যেদিন উত্তপ্ত সূর্য মাথার কাছাকাছি অবস্থান করবে, যেদিন মানুষ ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে চারিদিকে ছুটাছুটি করতে থাকবে সেদিন যদি আপনি চান যে, আল্লাহ আপনার সমস্ত ভয় দূর করে দিন, দুশ্চিন্তা মুক্ত রাখুন, তবে আপনাকে যা যা করতে হবে, তা সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেছেন, الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ لَا يُتْبِعُونَ مَا أَنْفَقُوا مَنًّا وَلَا أَذًى لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ‘যারা আল্লাহ তাআলার পথে নিজেদের ধনসম্পদ ব্যয় করে এবং ব্যয় করে তা প্রচার করে বেড়ায় না, প্রতিদান চেয়ে তাকে কষ্ট দেয় না, এ ধরনের লোকদের জন্য তাদের মালিকের কাছে পুরস্কার সংরক্ষিত রয়েছে, শেষ বিচারের দিন এদের কোনো ভয় নেই, তারা সেদিন দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না’ (আল-বাক্বারা২/২৬২)। কাজেই দান সবসময় গোপন রাখুন। কাউকে দান করে সেটা আবার অন্যকে বলে বেড়ানোর দরকার নেই। এগুলো ভালো মানসিকতাসম্পন্ন মানুষের কাজ নয়। অবশ্য, যদি সত্যিকার অর্থে অন্যকে উৎসাহের জন্য প্রকাশ্যে দান করা হয়, তাহলে সেটা ভিন্ন কথা। সেটা দূষণীয় নয়। মোটকথা, যারা মর্যাদাবান, তারা তাদের আমলকে গোপন রাখবে। কোনো মানুষ তার নেক আমল জেনে গেল কি-না অর্থাৎ তার আমলে ‘রিয়া’ ঢুকে গেল কিনা সে নিয়ে বরং তার মনে এক ধরনের দুশ্চিন্তা কাজ করবে। এটাই ঈমানের দাবি, এটাই তাক্বওয়ার বহিঃপ্রকাশ। 

[৩]

আমরা অনেকেই মানুষকে দান করেও বিভিন্নভাবে কষ্ট দিয়ে দেই। এমন দান মোটেও কাম্য নয়, যে দান অন্যকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কষ্ট দেওয়ার কারণ হয়, যে দান আল্লাহর সন্তুষ্টির পরিবর্তে অসন্তুষ্টির কারণ হয়। অনেক সময় দান গৃহীতারা চান না যে, দানশীল ব্যক্তি তাকে দান করার বিষয় অন্তত তার পরিচিত কাউকে বলে বেড়ান। কেননা তাতে তিনি যাকে বলে বেড়াচ্ছেন, সে ঐ ব্যক্তিকে দান করতে চাইলেও আরেকজন ইতোমধ্যে দান করেছেন জেনে যাওয়ায় সে হয়তো আর ঐ ব্যক্তিকে দান করবে না। ফলে তিনি আরেকজনের দান পাওয়া থেকে বঞ্চিত থেকে যাবেন, যা পেলে তিনি হয়তো আরও উপকৃত হতেন। ফলশ্রুতিতে, দাতার অজান্তেই দান করার পরও তার উপর গ্রহীতার কষ্ট থেকে যায়। বিধায় কাউকে দান করে অন্যত্র বলে বেড়ানো বিশেষ করে তার পরিচিত কাউকে বলে বেড়ানো কেমন জানি তাকে পরোক্ষভাবে কষ্ট দেওয়ার শামিল।

মনে করুন, আমি আপনাকে কিছু টাকা দান করলাম। আর আপনাকে এই দানের বিষয় আমি আপনার পরিচিতদেরকে বলে বেড়ালাম যে, আমি তোমার অমুককে এত টাকা দান করেছি। এখন আমি আপনাকে দান করেছি জেনে আপনার পরিচিতদের যারা আপনাকে সচরাচর দান করত, তারা হয়তো এই ভেবে আর আপনাকে দান করছে না যে, তাকে তো একজন দান করেছেই। তাই আর তাকে আমার দেওয়ার দরকার নেই। অথচ তাদের দান পেলে আপনি আরও উপকৃত হতেন। কিন্তু আমার দানের কথা বলে দেওয়াতে তারা কিংবা তাদের অনেকেই আপনাকে আর দান করছে না। আর ঠিক এই বিষয়টি আপনাকে আপনার ঐ পরিচিতরা বলে দিলেন যে, আমি তাদেরকে আপনাকে দানের কথা বলেছি। এই অবস্থায় আপনার কেমন লাগবে, ভাবুন তো।

আমি আপনাকে দান করা সত্ত্বেও কি আপনি আমার ওপর খুশি থাকবেন? আপনার কি মনে মনে এই ভেবে কষ্ট হবে না যে, কী দরকার ছিল রে ভাই তাদেরকে তোমার এই দানের কথা বলে বেড়ানোর? তুমি তাদেরকে বলে না বেড়ালে তারাও আমাকে দান করত। আর এতে আমি আরও উপকৃত হতাম। আমাকে তুমি দান করেছ এটা গোপন রাখলে কি তোমার খুব ক্ষতি হয়ে যেত? মোটকথা, আমার এমন আচরণে আপনি কষ্ট পাবেন। ঠিক এই জায়গায় আল্লাহ কী বলেছেন, জানেন?

আল্লাহ তাআলা বলেছেন,قَوْلٌ مَعْرُوفٌ وَمَغْفِرَةٌ خَيْرٌ مِنْ صَدَقَةٍ يَتْبَعُهَا أَذًى وَاللَّهُ غَنِيٌّ حَلِيمٌ ‘একটুখানি সুন্দর কথা বলে এবং উদারতা দেখিয়ে ক্ষমা করে দেওয়া সেই দানের চাইতে উত্তম, যে দানের পরিণাম কষ্টই আসে; আল্লাহ তাআলা কারোরই মুখাপেক্ষী নন, তিনি পরম ধৈর্যশীল বটে’ (আল-বাক্বারা২/২৬৩)। অর্থাৎ আমার ঐ দান, যে দান আপনাকে পরোক্ষভাবে হলেও কষ্ট দিলো তথা যে দানের ফলাফল কষ্ট সেই দান না করে যদি আমি আপনার সাথে কেবল সুন্দর করে একটু কথা বলতাম তবুও সেই দানের চেয়ে তা উত্তম হতো। যে দানের পাশে কষ্টের অবস্থান থাকে, সেই দান না করে উত্তম কথা বলা তথা সুন্দর আচরণ করাকেই আল্লাহ উত্তম বলছেন। 

অন্যদিকে, আয়াতের শেষে আল্লাহ বলেছেন, আমি কারো মুখাপেক্ষী নই। এ কথায় কী প্রকাশ পাচ্ছে, জানেন? এই কথায় আল্লাহর গোস্সা বা রাগ প্রকাশ পাচ্ছে। অর্থাৎ যাদের দান মানুষকে কোনো না কোনোভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদেরকে বোঝাতে চাচ্ছেন, তুমি মনে করো না যে, আমি তোমার দানের জন্য ঠেকায় পড়েছি। যে দান করেও কাউকে কষ্ট দেওয়া হয়ে যায়, হোক সেটা কটু কথা দ্বারা, খোঁটা দ্বারা কিংবা নীরব কোনো আচরণ দ্বারা আল্লাহর নিকট সেই দানের কোনো মূল্য নেই। তোমার এমন দানে আমার কিচ্ছু আসে যায় না। 

সত্যিকার অর্থে যদি আমি আল্লাহর সন্তুষ্টিকে কেন্দ্র করে দান করে থাকি, তাহলে শুধু শুধু অন্যকে আমার দানের কথা বলে বেড়ানোর কী দরকার! এতে তো লোক দেখানো হয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি তোমাদের ব্যাপারে ছোট শিরক নিয়ে যতটা ভয় পাচ্ছি, অন্য কোনো ব্যাপারে এতটা ভীত নই’। তারা (ছাহাবী) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল। ছোট শিরক কী? তিনি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রিয়া বা লোক দেখানো। আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন বান্দার আমলের প্রতিদান প্রদানের সময় বলবেন, ‘তোমরা পৃথিবীতে যাদের দেখাতে, তাদের কাছে যাও। দেখো, তাদের কাছে তোমাদের কোনো প্রতিদান আছে কিনা?’[4]

[৪]

আমাদের মধ্যে এমনও অনেক মানুষ আছেন, যারা দান করে খোঁটা দিয়ে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে আমরা নিজেরাও বুঝতে পারি না যে, আমাদের বলা কথাগুলো খোঁটা দেওয়ার শামিল হয়ে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা কেউ কেউ এরকমও বলে ফেলি যে, এই যে! তোমাকে না আমি সেদিন কিছু টাকা দিলাম। আজ আবার কী! কিংবা এভাবেও বলে ফেলি যে, তোমাকে তো আমি সবসময়ই সাহায্য করি, যাকাতের টাকা তোমাকেই তো বেশি করে দেই, দরকারের সময় আমাকে দিনে ১০ বার ফোন করতে পার, আর একবার টাকা পেয়ে গেলে আর কোনোদিন ফোন করতে পার না ইত্যাদি আরও কতভাবে বলি। আসলে, আমরা যারা এভাবে কষ্টদায়ক কথা বলে কাউকে খোঁটা দিচ্ছি তখন আমাদের দান সাথে সাথেই বরবাদ হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেছেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُمْ بِالْمَنِّ وَالْأَذَى كَالَّذِي يُنْفِقُ مَالَهُ رِئَاءَ النَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ صَفْوَانٍ عَلَيْهِ تُرَابٌ فَأَصَابَهُ وَابِلٌ فَتَرَكَهُ صَلْدًا لَا يَقْدِرُونَ عَلَى شَيْءٍ مِمَّا كَسَبُوا وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা উপকারের খোঁটা দিয়ে এবং অনুগৃহীত ব্যক্তিকে কষ্ট দিয়ে তোমাদের দান-ছাদাক্বা বরবাদ করে দিয়ো না, ঠিক সেই হতভাগ্য ব্যক্তির মতো যে শুধু লোক দেখানোর উদ্দেশ্যেই দান করে, সে আল্লাহ তাআলা ও পরকালের ওপর বিশ্বাস করে না; তার দানের উদাহরণ হচ্ছে, যেন একটি মসৃণ শিলাখণ্ডের ওপর কিছু মাটির আস্তরণ সেখানে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হলো, অতঃপর পাথর শক্ত হয়েই পড়ে থাকল; দান-খয়রাত করেও তারা মূলত এই অর্জনের ওপর থেকে কিছুই করতে পারল না, আর যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে না, আল্লাহ তাআলা তাদের কখনো সঠিক পথ দেখান না’ (আল-বাক্বারা২/২৬৪)

অপরদিকে, যারা একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য এবং নিজেদের মানসিক অবস্থা সুদৃঢ় রাখার জন্য নিজেদের ধনসম্পদ ব্যয় করে তাদের উদাহরণ হচ্ছে, যেন তা কোনো উঁচু পাহাড়ের উপত্যকায় একটি সুসজ্জিত ফসলের বাগান, যদি সেখানে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়, তাহলে ফসলের পরিমাণ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। আর প্রবল বৃষ্টিপাত না হলেও শিশিরবিন্দুগুলোই ফসলের জন্য যথেষ্ট হয়, আল্লাহ তাআলা ভালো করেই পর্যবেক্ষণ করেন তোমরা কে কী কাজ করো (আল-বাক্বারা, ২/২৬৫)

[৫]

বর্তমানে উৎসাহের নামে আমরা অনেকে দানকে বেশ জোরেসোরে প্রচার করে বেড়াই। উৎসাহের নামে প্রাকাশ্যে দান করা দোষের কিছু নয়। আসলেই যদি উৎসাহের জন্য প্রকাশ্যে দান করতে চাই, তাহলে তো করাই যায়। তবে আমরা যারা প্রকাশ্যে দান করি, তাদের উচিত প্রকাশ্য দান করার পূর্বে নিজের সাথে একটু কথা বলে নেওয়া যে, এই দানের উদ্দেশ্যটা আসলে কী? একমাত্র আল্লাহরই সন্তুষ্টি অর্জন, না-কি মানুষের বাহবা পাওয়া বা মানুষের নিকট নিজেকে দানশীল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, কোনটি? যদি উত্তর দ্বিতীয়টি হয়, তবে দানের পুরস্কার আল্লাহর পরিবর্তে তার সৃষ্টির কাছ থেকে নেওয়া হয়ে যাচ্ছে না তো?

প্রকৃতপক্ষে, এমনভাবে দান করা উত্তম, যার বিশুদ্ধতা নিয়ে কোনো প্রশ্নের ফাঁক থাকে না। সেই হাদীছ মোতাবেক দান করা সর্বোত্তম যেই হাদীছে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা এমনভাবে দান করো, যেনো ডান হাত দিয়ে দান করলে বাম হাতেও টের না পায়’।[5] অর্থাৎ গোপনে দান করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। আর গোপনে দান করার শান্তিই আলাদা।


[1]. ছহীহ বুখারী, হা/১৪১৯।

[2]. ছহীহুল জামে‘, হা/৩৭৬৬।

[3]. বাযযার, হা/৫৮৪০।

[4]. ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩২।

[5]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৮০৬।

Comments

|| Popular Posts ||

আমি অলী ছাড়া বিয়ে করেছি। পরে জানতে পারলাম যে, অলী ছাড়া বিয়ে বাতিল। পরবর্তীতে তিনবারে মেয়েকে তিন তালাক প্রদান করেছি। এখন কি মেয়েটাকে আমার মোহর দেওয়া লাগবে?

Bilqis(Queen of Sheba): Tafseer of Ibn katheer : Qur'anic Story

Fatwa বিবাহ ও তালাক

Famous 100 fabricated hadith:

The Prophet warns his kindred of idolatry....

Moving the finger during Tashahhud _ Important Masala-Masael,

ছবি-মূর্তির ভয়াবহতা :

টাখনুর নীচে কাপড় পরিধানের শাস্তি :