আদ জাতির কাহিনী__ সূরা ১১. হূদ_ Story of Aad _tafseer

সূরা ১১. হূদ
আয়াত নং 50 to 

[তাফসীরে জাকারিয়া] ৫০. আর আদ জাতির কাছে তাদের ভাই হুদকে পাঠিয়েছিলাম(১) তিনি বলেছিলেন, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই। তোমরা তো শুধু মিথ্যা রটনাকারী।(২)
(১) সূরা হুদের ৫০ হতে ৬০ পর্যন্ত ১১ আয়াতে বিশিষ্ট নবী হুদ আলাইহিস সালামের আলোচনা করা হয়েছে। তাঁর নামেই সূরার নামকরণ হয়েছে। এ সূরার মধ্যে নূহ আলাইহিস সালাম হতে মূসা আলাইহিস সালাম পর্যন্ত সাতজন আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালাম ও তাদের উম্মতগণের কাহিনী কুরআন পাকের বিশেষ বাচনভঙ্গিতে বর্ণনা করা হয়েছে। যার মধ্যে উপদেশ ও শিক্ষামূলক এমন তথ্যাদি তুলে ধরা হয়েছে যা যে কোন অনুভূতিশীল মানুষের অন্তরে ভাবান্তর সৃষ্টি না করে পারে না। তাছাড়া ঈমান ও সৎকর্মের বহু মূলনীতি এবং উত্তম পথনির্দেশ রয়েছে। যদিও এ সূরার মধ্যে সাত জন নবীর কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সূরার নামকরণ করা হয়েছে হুদ আলাইহিস সালাম এর নামে। যাতে বোঝা যায় যে এখানে হুদ এর ঘটনার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

(২) অর্থাৎ অন্যান্য যেসব মাবুদদের তোমরা বন্দেগী ও পূজা-উপাসনা করো তারা আসলে কোন ধরনের প্রভুত্বের গুণাবলী ও শক্তির অধিকারী নয়। বন্দেগী ও পূজা লাভের কোন অধিকারই তাদের নেই। তোমরা অযথাই তাদেরকে মাবুদ বানিয়ে রেখেছো। তারা তোমাদের আশা পূরণ করবে এ আশা নিয়ে বৃথাই বসে আছো। তোমরা আল্লাহকে ছাড়া অন্য ইলাহ গ্রহণের ব্যাপারে আল্লাহর উপর মিথ্যাচারই করে যাচ্ছ। তিনি ছাড়া তো কোন সত্যিকার ইলাহ নেই। [তাবারী; কুরতুবী; সা’দী]

[তাফসীরে জাকারিয়া] ৫১. হে আমার সম্প্রদায় আমি এর পরিবর্তে তোমাদের কাছে পরিশ্রমিক চাই না। আমার পারিশ্রমিক আছে তাঁরই কাছে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। এরপরও কি তোমরা বুঝবে না?(১)
(১) অর্থাৎ তোমরা কি বিবেক বুদ্ধি খাটাবে না যে, আমি যে দিকে আহবান করছি তা ভেবে দেখা দরকার এবং তা কবুল করার অধিক উপযোগী, একে বাদ দেয়ার কোন বাঁধা নেই। [সা’দী]

[তাফসীরে জাকারিয়া] ৫২. হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থন কর, তারপর তার দিকেই ফিরে আস। তিনি তোমাদের উপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষাবেন। আর তিনি তোমাদেরকে আরো শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন এবং তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না।(১)
(১) আল্লাহ তা'আলা হুদ আলাইহিস সালামকে আদ জাতির প্রতি নবীরূপে প্রেরণ করেছিলেন। দৈহিক আকার আকৃতিতে ও শারীরিক শক্তি সামথ্যের দিক দিয়ে আদ জাতিকে মানব ইতিহাসে অনন্য বলে চিহ্নিত করা হয়। [সা’দী] হুদ আলাইহিস সালামও উক্ত জাতিরই অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এ আয়াত ও পূর্ববর্তী আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, তিনি তাদেরকে মৌলিকভাবে তিনটি দাওয়াত দিয়েছিলেন। এক. তাওহীদ বা একত্ববাদের আহবান এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন সত্তা বা শক্তিকে ইবাদত উপাসনা না করার আহবান। দুই. তিনি যে তাওহীদের দাওয়াত নিয়ে এসেছেন, তাতে তিনি একজন খালেস কল্যাণকামী, এর জন্য তিনি তাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চান না। তিন. নিজেদের অতীত জীবনে কুফরী শির্কী ইত্যাদি যত গোনাহ করেছ সেসব থেকে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং ভবিষ্যতের জন্য ঐসব গোনাহ হতে তওবা কর। যদি তোমরা সত্যিকার তাওবা ও এস্তেগফার করতে পার তবে তার বদৌলতে আখেরাতের চিরস্থায়ী সাফল্য ও সুখময় জীবন তো লাভ করবেই। দুনিয়াতেও এর বহু উপকারিতা দেখতে পাবে। দুর্ভিক্ষ ও অনাবৃষ্টির পরিসমাপ্তি ঘটবে যথাসময়ে শক্তি সামর্থ্য বর্ধিত হবে। এখানে ‘শক্তি’ শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যার মধ্যে দৈহিক শক্তি এবং ধন বল ও জনবল সবই অন্তর্ভুক্ত। [দেখুন, কুরতুবী; ইবন কাসীর] এর দ্বারা আরো জানা গেল যে তওবা ও এস্তেগফারের বদৌলতে দুনিয়াতেও ধন সম্পদ এবং সন্তানাদির মধ্যে বরকত হয়ে থাকে।

[তাফসীরে জাকারিয়া] ৫৩. তারা বলল, হে হুদ! তুমি আমাদের কাছে কোন স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে আসনি(১), তোমার কথায় আমরা আমাদের উপাস্যদেরকে পরিত্যাগকারী নই এবং আমরা তোমার প্রতি বিশ্বাসীও নই।
(১) অর্থাৎ আপনি আপনার দাবীর স্বপক্ষে এমন কোন দ্ব্যর্থহীন আলামত অথবা কোন সুস্পষ্ট দলীল নিয়ে আসেননি যার ভিত্তিতে আমরা নিসংশয়ে জানতে পারি যে, আল্লাহ আপনাকে পাঠিয়েছেন এবং যে কথা আপনি পেশ করছেন তা সত্য। [কুরতুবী; ইবন কাসীর] এখানে যদি কাফেররা তাদের পক্ষ থেকে দাবীকৃত কোন সুনির্দিষ্ট দলীলপ্রমাণের কথা বলে থাকে তবে সেটাই আনতে হবে এমন কোন বাধ্য-বাধকতা নেই। বরং নবী-রাসূলগণ এমন নিদর্শন নিয়ে আসেন যা দেখে তাদের দাবীর সত্যতা ও বিশুদ্ধতা প্রমাণিত হয়। আর যদি তাদের উদ্দেশ্য হয় এটা যে, তিনি তাদের কাছে এমন কোন স্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে আসেননি যা তার কথার সত্যতার প্রমাণ বহন করবে, তবে তারা মিথ্যা বলেছে। কেননা, প্রত্যেক নবীকেই তার কাওমের কাছে এমন কিছু নিদর্শন দিয়ে পাঠানো হয় যা দেখে কিছু লোক ঈমান আনে।

এমনকি যদি তিনি একমাত্র আল্লাহর জন্য দ্বীনকে নির্দিষ্ট করা, তাঁর কোন শরীক না করা, প্রতিটি ভাল কাজ ও সুন্দর চরিত্রের প্রতি নির্দেশ প্রদান, প্রত্যেক খারাপ কাজ যেমন আল্লাহর সাথে শির্ক, অশ্লীলতা, যুলুম, অন্যায় কাজ কর্ম থেকে নিষেধকরণ, তাছাড়া হুদ আলাইহিস সালাম সে সমস্ত অনন্য গুণাবলীর অধিকারী হওয়া, যা কেবল ভাল ও সত্যনিষ্ঠ মানুষদেরই গুণ হয়ে থাকে, এগুলো ছাড়া আর কোন নিদর্শন না এনে থাকেন তাও তার সত্যবাদিতার জন্য নিদর্শন ও দলীল-প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট। বরং বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা স্পষ্ট বুঝতে পারে যে অলৌকিক কিছুর চেয়েও এগুলো বেশী প্রমাণবহ। মু'জিযার মত কিছুর চেয়ে এগুলোর দাবী বেশী। তাছাড়া একজন লোক, যার কোন সাহায্য-সহযোগিতাকারী নেই, অথচ সে তার কাওমের মধ্যে চিৎকার করে আহবান করছে, তাদেরকে ডাকছে, তাদেরকে অপারগ করে দিচ্ছে এটা অবশ্যই তার সত্যতার উপর স্পষ্ট নিদর্শন।

তিনি তাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন যে, “নিশ্চয় আমি আল্লাহকে সাক্ষী করছি এবং তোমরাও সাক্ষী হও যে, নিশ্চয় আমি তা থেকে মুক্ত যাকে তোমরা শরীক কর, আল্লাহ ছাড়া। সুতরাং তোমরা সবাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কর; তারপর আমাকে অবকাশ দিও না।” এটা তাদের সামনে ঘোষণা করছেন, যারা তার শক্র, যাদের রয়েছে প্রচুর ক্ষমতা ও প্রভাব। তারা চাচ্ছে যে কোনভাবে হোক তার কাছে যে আলো আছে সেটা নিভিয়ে দিতে, অথচ তিনি তাদের কোন প্রকার ভ্রক্ষেপ না করে, তাদের শক্তি-সামর্থ্যকে গুরুত্ব না দিয়ে এ ঘোষণা দিয়েই চলেছেন। আর তারা তার কোন ক্ষতি করতে অপারগ হয়ে থাকল, এতে অবশ্যই বিবেকবান-জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে। [সা’দী, ইবনুল কাইয়্যেম, মাদারেজুস সালেকীন: ৩/৪৩১]

[তাফসীরে জাকারিয়া] ৬০. আর এ দুনিয়ায় তাদেরকে করা হয়েছিল লা'নতগ্রস্ত এবং লা'নতগ্রস্ত হবে তারা কিয়ামতের দিনেও। জেনে রাখ! আদ সম্প্রদায় তো তাদের রবকে অস্বীকার করেছিল। জেনে রাখ! ধ্বংসই হচ্ছে হুদের সম্প্রদায় ‘আদের পরিণাম।(১)
(১) ‘আদ জাতির কাহিনী ও আযাবের ঘটনা বর্ণনা করার পর আপরাপর লোকদের শিক্ষা ও সতর্কীকরণের জন্য এরশাদ করেছেন যে কাওমে আদ আল্লাহর আয়াত ও নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করেছে, আল্লাহর রাসূলগণকে অমান্য করেছে, হঠকারী পাপিষ্ঠদের কাজ করেছে। যার ফলে দুনিয়াতে তাদের প্রতি গযব নাযিল হয়েছে এবং আখেরাতে অভিশপ্ত আযাবে নিক্ষিপ্ত হবে।



Comments

|| Popular Posts ||

The Hasan Hadeeth: Its definition and usage with the Scholars of Hadeeth

√√√√40 short hadiths filled with wisdom°°°°

The Story of The Aad And The Thamud Nation_ Qur'an Tafseer

Suhih Bukhari_ Book of _ Virues of Al-Quran :

মৃত্যুর সময় যে আপসোস রয়ে যাবে! :

বনী ইসরাইলের গরুর কাহিনী _ The story of cow

The Story of Qarun(Korah)

Moving the finger during Tashahhud _ Important Masala-Masael,

Fatwa_The difference between Ibadah (Worship) and Obedience – Imam Ibn Baaz