সূরা ৩. আলে-ইমরানআয়াত নং ২ ___ tafser

اللّٰہُ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ ۙ الۡحَیُّ الۡقَیُّوۡمُ ؕ﴿۲﴾ 

অনুবাদঃ 
আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরপ্রতিষ্ঠিত ধারক। -(আল-বায়ান)

আল্লাহ, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব সকলের রক্ষণাবেক্ষণকারী।  -(তাইসিরুল)

আল্লাহ ছাড়া কোনই ইলাহ (উপাস্য) নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও নিত্য বিরাজমান। -(মুজিবুর রহমান)


তাফসীরে আহসানুল-বায়ান

(২) আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও সব কিছুর ধারক। [1]

[1] حَيٌّ এবং قَيُّومٌ মহান আল্লাহর বিশেষ গুণ। ‘হায়্যুন’এর অর্থ তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর মৃত্যু ও ধ্বংস নেই। ‘ক্বায়্যুম’এর অর্থ, তিনি নিখিল বিশ্বের ধারক, সংরক্ষণকারী এবং পর্যবেক্ষক। বিশ্বের সব কিছুই তাঁর মুখাপেক্ষী, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। খ্রিষ্টানরা ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহ অথবা তাঁর পুত্র কিংবা তিনের এক মনে করত। সুতরাং তাদেরকে বলা হচ্ছে যে, ঈসা (আঃ)ও যখন আল্লাহর সৃষ্টি, তিনি মায়ের পেট থেকে জন্ম নিয়েছেন এবং তাঁর জন্মকালও পৃথিবী সৃষ্টির বহুকাল পর। তাহলে তিনি আল্লাহ অথবা তাঁর পুত্র কিভাবে হতে পারেন? যদি তোমাদের বিশ্বাস সঠিক হত, তাহলে সে সৃষ্টি হয়ে তাকে ইলাহী গুণের অধিকারী এবং অনাদি হওয়া উচিত ছিল। অনুরূপ তাঁর উপর মৃত্যু আসাও উচিত নয়, কিন্তু এমন এক সময় আসবে যখন মৃত্যু তাঁকে গ্রাস করবে। আর খ্রিষ্টানদের ধারণা অনুযায়ী তিনি তো মারাই গেছেন। বহু হাদীসে এসেছে যে, আল্লাহর ইসমে আ’যম (মহান নাম) তিনটি আয়াতে এসেছে। কেউ যদি এই নামের অসীলায় দু’আ করে, তাহলে তা প্রত্যাখ্যাত হয় না। এক তো এই সূরা আলে-ইমরানে। দ্বিতীয় আয়াতুল কুরসীতে [اللهُ لا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ] এবং তৃতীয় সূরা ত্বাহাতে [وَعَنَتِ الْوُجُوهُ لِلْحَيِّ الْقَيُّومِ] (ইবনে কাসীর-তাফসীর আয়াতুল কুরসী)



তাফসীরে জাকারিয়া


২. আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন প্রকৃত ইলাহ নেই(১), তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক।(২)

(১) এ আয়াতে তাওহীদের ইতিহাসভিত্তিক প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। যেমন, মনে করুন, কোন একটি বিষয়ে বিভিন্ন দেশের অধিবাসী ও বিভিন্ন সময়ে জন্মগ্রহণকারী সব মানুষ একমত। পূর্বাপর এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে শত শত, এমন কি হাজার হাজার বছরের ব্যবধান। একজনের উক্তি অন্য জনের কাছে পৌছারও কোন উপায় নেই। তা সত্বেও যিনিই আসেন তিনিই যদি পূর্ববর্তীদের মত একই কথা বলেন, একই কর্ম ও একই বিশ্বাসের অনুসারী হন, তবে এমন বিষয়ের সত্যতা স্বীকার করে নিতে মানব-স্বভাব বাধ্য। উদাহরনতঃ আল্লাহ্ তা'আলার তাওহীদের পরিচয় সম্পর্কিত তথ্যাদিসহ সর্বপ্রথম আদম আলাইহিস সালাম দুনিয়াতে পদার্পণ করেন। তার ওফাতের পর তার বংশধরদের মধ্যে আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কিত এই তথ্যের চর্চা প্রচলিত ছিল। কিন্তু দীর্ঘকাল অতিবাহিত হওয়ার পর এবং আদম সন্তানদের প্রাথমিক কালের আচার-অভ্যাস, সভ্যতাসংস্কৃতি প্রভৃতি সর্ববিষয়ে ব্যাপক পরিবর্তন সূচীত হওয়ার পর নুহ আলাইহিস সালাম আগমন করেন।

তিনিও মানুষকে আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কিত ঐসব বিষয়ের দিকে দাওয়াত দিতে থাকেন, যেসব বিষয়ের দিকে আদম 'আলাইহিস্ সালাম দাওয়াত দিতেন। অতঃপর সুদীর্ঘকাল অতীতের গর্ভে বিলীন হওয়ার পর ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক ও ইয়াকুব আলাইহিমুস সালাম ইরাক ও সিরিয়ায় জন্মগ্রহন করেন। তারাও হুবহু একই দাওয়াত নিয়ে কর্মক্ষেত্রে অবতরন করেন। এরপর মুসা ও হারুন আলাইহিমাস সালাম এবং তাদের বংশের রাসূলগণ আগমন করেন। তারা সবাই সে একই কালেমায়ে তাওহীদের বাণী প্রচার করেন এবং এ কালেমার প্রতি মানুষজনকে দাওয়াত দিতে থাকেন। এরপরও দীর্ঘকাল অতিবাহিত হয়ে গেলে ঈসা আলাইহিস সালাম সেই একই আহবান নিয়ে আগমন করেন। সবার শেষে খাতামুল-আম্বিয়া মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই তাওহীদের দাওয়াত নিয়ে দুনিয়াতে আবির্ভূত হন।

মোটকথা, আদম থেকে শুরু করে শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত যত নবী ও রাসূল বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাষায় এবং বিভিন্ন দেশে জন্মগ্রহণ করেন এবং সবাই একই বাণী উচ্চারণ করেন। তাদের অধিকাংশেরই পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ পর্যন্ত হয়নি। তাদের আবির্ভাবকালে গ্রন্থ রচনা ও প্রকাশনার আমলও ছিল না যে, এক রাসূল অন্য রাসূলের গ্রন্থাদি ও রচনাবলী পাঠ করে তার দাওয়াতের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করবেন; বরং তাদের একজন অন্যজন থেকে বহুদিন পরে জন্মগ্রহণ করেছেন। জাগতিক উপকরণাদির মাধ্যমে পূর্ববর্তী রাসূলগণের কোন অবস্থা তাদের জানা থাকারও কথা নয়। আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী লাভ করেই তারা পূর্বসুরীদের যাবতীয় অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞাত হন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকেই তাদেরকে এ দাওয়াত প্রচার করার জন্য নিযুক্ত করা হয়।

এখন যে ব্যক্তি ইসলাম ও তাওহীদের দাওয়াতের প্রতি মনে মনে কোনরূপ বৈরীভাব পোষণ করে না, সে যদি খোলা মনে সরলভাবে চিন্তা করে, তবে এত বিপুল সংখ্যক নবী-রাসূল বিভিন্ন সময় এক বিষয়ে একমত হওয়াই বিষয়টির সত্যতা নিরূপণের জন্যে যথেষ্ট। কিন্তু রাসূলগণের ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য, তাদের সততা ও সাধুতার উচ্চতম মাপকাঠির প্রতি দৃষ্টিপাত করলে কারো পক্ষে এরূপ বিশ্বাস করা ছাড়া গত্যন্তর নেই যে, তাদের বাণী ষোল আনাই সত্য এবং তাদের দাওয়াতে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতেরই মঙ্গল নিহিত। [তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন]

(২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু'টি আয়াতের মধ্যে আল্লাহ তা'আলার ইসমে আযম রয়েছে, এক, (وَإِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ لَّا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَٰنُ الرَّحِيمُ) দুই, সূরা আলে ইমরানের প্রথম দু' আয়াত’। [তিরমিযীঃ ৩৪৭৮]


Comments

|| Popular Posts ||

বিষয়__ জাহান্নামের স্তরসমূহ এবং শাস্তি _ গ্রন্থঃ জান্নাত-জাহান্নাম

Moving the finger during Tashahhud _ Important Masala-Masael,

Question:What is the correct explanation for the Prophet's saying: "The one who knows the most Qur'aan should lead the people in prayer…"? _ Fatwa collection

আল-ইতিছাম pdf download _ al itisham

The Prophet warns his kindred of idolatry....

The Story of Qarun(Korah)

টাখনুর নীচে কাপড় পরিধানের শাস্তি :

Why Allah sent Prophets and Messengers ? – Muhsin Khan & Hilaali