পরিচ্ছেদ__ হজ্জ শর্ত | লেখক_ শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ

ইসলামী শরীয়াত মহান আল্লাহর পক্ষ হতে আগত যিনি প্রজ্ঞাময় ও মহাজ্ঞানী। সুতরাং তার প্রত্যেকটি বিধানে রয়েছে প্রজ্ঞা ও ন্যায়-নীতি। এজন্যই কোন ফরয-ওয়াজিব বিষয় পালন করা কোন মানুষের জন্য তখনই আবশ্যক হবে যখন তার শর্তাবলী বিদ্যমান হবে, যাতে করে তা ফরয হওয়া যুক্তি সংগত হয়। তারই একটি বিষয় হলো হাজ্জ ফরয হওয়া, যা কোন বান্দার উপর ফরয হয় না যতক্ষণ তা ফরয হওয়ার শর্তসমূহ না পাওয়া যায়। আর তা হলো:














১। প্রথম শর্ত: মুসলিম হওয়া (أن يكون مسلماً)। তাই কোন কাফিরের প্রতি ইসলাম গ্রহণের পূর্বে হাজ্জ ফরয নয়। অতএব আমরা তাকে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণের জন্য আহবান করব, অতঃপর ইসলাম গ্রহণ করলে তাকে ইসলামের অন্যান্য ফরয বিষয় পালন করার নির্দেশ দিব। কারণ ইসলাম না থাকলে কোন আমল আল্লাহর নিকটে কবুল হবে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ইরশাদ করেন:

وَمَا مَنَعَهُمْ أَن تُقْبَلَ مِنْهُمْ نَفَقَاتُهُمْ إِلاَّ أَنَّهُمْ كَفَرُواْ بِاللّهِ وَبِرَسُولِهِ وَلاَ يَأْتُونَ الصَّلاَةَ إِلاَّ وَهُمْ كُسَالَى وَلاَ يُنفِقُونَ إِلاَّ وَهُمْ كَارِهُونَ

তাদের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য গ্রহণ নিষিদ্ধ করার কারণ এ ছাড়া আর কিছু নয় যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে অস্বীকার করে, সলাতে আসলে আসে শৈথিল্যভরে আর দান করলেও করে অনিচ্ছা নিয়ে।[1]

২। দ্বিতীয় শর্ত: বিবেক সম্পন্ন হওয়া (العقل)। তাই কোন পাগলের প্রতি হজ্জ ফরয নয়। আর পাগল থাকা অবস্থায় তাকে হজ্জ করালেও শুদ্ধ হবে না। কারণ, হজ্জের জন্য নিয়ত (মনের সংকল্প) হওয়া ফরয, আর ইহা পাগল দ্বারা সম্ভব নয়।

৩। তৃতীয় শর্ত: সাবালক হওয়া (البلوغ)। আর তার লক্ষণ হচ্ছে নিম্নোক্ত তিনটি বিষয়ের কোন একটি:

(১) বির্যপাত বা স্বপ্নদোষ হওয়া: কেননা আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:

(وَإِذَا بَلَغَ الْأَطْفَالُ مِنكُمُ الْحُلُمَ فَلْيَسْتَأْذِنُوا كَمَا اسْتَأْذَنَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ )النور59

তোমাদের শিশুরা যখন বয়োঃপ্রাপ্ত হবে তখন তারা যেন তোমাদের নিকট আসতে অনুমতি নেয়, যেমন তাদের বয়োজ্যোষ্ঠরা অনুমতি নেয়। এভাবে আল্লাহ্ তাঁর নির্দেশ খুবই স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, কারণ আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।[2] নাবী (সা.) এর বাণী:

غُسْلُ يَوْمِ الجُمُعَةِ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُحْتَلِمٍ

জুমআর দিনে গোসল করা প্রত্যেক সাবালক ব্যক্তির উপর ওয়াজীব।[3]

(২) নাভীর নিচের চুল গজানো: আর তা হলো এমন খশখশে চুল যা লজ্জাস্থানের চার পার্শ্বে হয়ে থাকে। যার প্রমাণ আত্বীয়া কুরাযী -এর বর্ণিত হাদীস; তিনি বলেন, আমাদেরকে কুরায়যার যুদ্ধের দিনে নাবী (সা.) এর সামনে পেশ করা হয়। সুতরাং আমাদের মধ্যে যারা সাবালক ছিল কিংবা তার নাভীর নিচের চুল গজিয়ে ছিল তাকে শাস্তিমূলক হত্যা করা হয় আর যার এমনটি হয়নি তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।[4]

(৩) পনের বছর বয়স পূর্ণ হওয়া: যার প্রমাণ আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) এর বর্ণিত হাদীস; তিনি বলেন, আমাকে ওহোদ যুদ্ধের সময় নাবী (সা.) এর সামনে (যুদ্ধে অংশ নেয়ার উদ্দেশ্যে পেশ করা হয় যখন আমার বয়স ছিল চৌদ্দ বছর কিন্তু তিনি (এ বয়সে) আমাকে যুদ্ধের অনুমতি দেননি।[5]

ইমাম বায়হাক্বী ও ইমাম ইবনু হিববান (রহঃ) আরো অতিরিক্ত বর্ণনা করেন যে, আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) বলেন, আমাকে নাবী (সা.) সাবালক বলে গণ্য করলেন না।

আর আমাকে খন্দক যুদ্ধের সময় নাবী (সা.) এর সামনে (যুদ্ধে অংশ নেয়ার উদ্দেশ্যে পেশ করা হয় যখন আমার বয়স ছিল পনের বছর তখন তিনি আমাকে যুদ্ধে অংশ নেয়ার অনুমতি দেন। ইমাম বায়হাক্বী ও ইমাম ইবনু হিববান (রহঃ) বর্ণনায় অতিরিক্ত আছে যে, আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) বলেন, আমাকে নাবী (সা.) সাবালক বলে গণ্য করলেন।

প্রখ্যাত তাবেঈ ইমাম নাফি’ (রহঃ) বলেন, আমি খালীফা উমার বিন আব্দুল আযীয (রহঃ) এর খেলাফত আমলে তাঁর নিকট গেলে তাঁকে এই হাদীসটি শুনাই তখন তিনি বলেন, এটাই হচ্ছে নাবালক ও সাবালকের মধ্যে সীমানা। অতঃপর তিনি নিজ গভর্ণরগণকে লিখেন যে, যে ব্যক্তি পনের বছর বয়সে পর্দাপণ করেছে তার সরকারী ভাতা নির্ধারিত করা হোক।

(৪) আর মেয়েদের সাবালিকা হওয়ার লক্ষণ ছেলেদের মতই। তবে চতুর্থ আর একটি বিষয় রয়েছে যা মেয়েদের সাবালিকা হওয়ার লক্ষণ, আর তা হলো, হায়য (মাসিক ঋতুস্রাব)। তাই কোন মেয়ের মাসিক ঋতুস্রাব হলেই সাবালিকা হয়ে যায়, যদিও তার বয়স দশ বছরের কম হয়।

সুতরাং ছেলে-মেয়েরা সাবালক সাবলিকা না হওয়া পর্যন্ত তাদের বয়সের স্বল্পতা এবং সাধারণতঃ ফরয বিষয়ের গুরু দায়িত্ব পালনে অযোগ্য হওয়ার কারণে তাদের প্রতি হাজ্জ ফরয হয় না। এর দলীল হচ্ছে নাবী (সা.) এর বাণী: তিন শ্রেণীর লোকের উপর থেকে শরিয়াতের কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে: ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ জাগ্রত না হয়, অপ্রাপ্ত বয়স্ক যতক্ষণ সাবালক না হয়ে যায় এবং পাগল ব্যক্তি যতক্ষণ বুদ্ধিমত্তা ফিরে না আসে।[6]

তবে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ের হাজ্জ শুদ্ধ হবে। যার দলীল আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.)-এর বর্ণিত হাদীস, তিনি বলেন যে, নাবী (সা.) এর কোন এক কাফেলার সাথে রাওহা নামক স্থানে সাক্ষাৎ ঘটে। তখন তিনি তাদের জিজ্ঞেস করেন যে, তারা কারা? তারা বলে, আমরা মুসলিম, তারা জিজ্ঞেস করে, আপনি কে? তিনি (সা.) বলেন, আমি আল্লাহর রসূল। তখন জনৈকা মহিলা এক শিশুকে তাঁর সামনে তুলে ধরে জিজ্ঞেস করেন, এর কি হাজ্জ হবে? তখন নাবী (সা.) বলেন: হ্যাঁ, আর তাতে তোমার (পরিশ্রমের জন্য) নেকী রয়েছে।[7]

সুতরাং নাবী (সা.) যখন শিশুর হাজ্জ সাব্যস্ত রাখলেন তাহলে হাজ্জের সাথে সংশিস্নষ্ট সব কিছুই সাব্যস্ত হবে। তাই তাকে ঐ সমস্ত ইহরামের অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে যা হতে প্রাপ্তবয়স্করা ইহরাম অবস্থায় বিরত থাকে। তবে বড়দের সাথে শিশুদের পার্থক্য হলো যে, শিশুরা ইহরামের অবস্থায় কোন নিষিদ্ধ কাজ ইচ্ছাকৃত ভাবে করে ফেললেও তা ভূলবশতঃ বলে গণ্য হবে। ফলে তারা যদি ইহরামের কোন নিষিদ্ধ কাজ করে ফেলে তাহলে তাদের উপর বা তাদের অভিভাবকদের উপর কোন ফিদয়া (মুক্তিপণ) দেয়া ফরয হবে না।

৪। চতুর্থ শর্ত: স্বাধীন হওয়া (الحرية)। সুতরাং কোন কৃতদাস বা কৃতদাসীর প্রতি দাসত্ব অবস্থায় থাকাকালীন হাজ্জ ফরয হবে না। কারণ, তাদের কোন ব্যক্তি মালিকানা নেই। (তারা যা কিছুই উপার্জন করে তা মনিবের) যার ফলে তারা অসামর্থবান।

৫। পঞ্চম শর্ত: আর্থিক ও দৈহিক দিক থেকে সামর্থবান হওয়া (الاستطاعة بالمال والبدن)। যাতে করে তার নিকট এতটা পরিমাণ সম্পদ থাকে যা দ্বারা তার হাজ্জের যাতায়াত এবং খাওয়া-থাকার খরচের ব্যবস্থা হয়ে যায়। আর এ হাজ্জে যাওয়ার পয়সা তার ঋণ পরিশোধ ও তার প্রতি ফরয ব্যয়বহন এবং তার পরিবারের পানাহার, পোশাক-পরিচ্ছদ, বিবাহ-শাদী, বাসস্থান, প্রয়োজনীয় বাহন ও বই-পুস্তক ইত্যাদীর উপর অতিরিক্ত যেন হয়। এর প্রমাণ মহান আল্লাহর বাণী:

(وَلِلّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ الله غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ )آل عمران97

আল্লাহর জন্য উক্ত ঘরের হাজ্জ করা লোকেদের উপর অবশ্য কর্তব্য যার সে পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য আছে। আর যে ব্যক্তি অস্বীকার করবে, (সে জেনে রাখুক) নিঃসন্দেহে আল্লাহ বিশ্ব জাহানের মুখাপেক্ষী নন।[8]

৬। আর মহিলাদের জন্য সামর্থ্যের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে তাদের সফর সঙ্গী হিসাবে মাহরামের (স্বামী বা এমন সাবালোক পুরুষ যার সাথে সফরে ইচ্ছুক মহিলার স্থায়ীভাবে বিবাহ হারাম) ব্যবস্থা হওয়া।

সুতরাং এমন মহিলার প্রতি হাজ্জ ফরয নয় যার কোন মাহরাম সফর সঙ্গীর ব্যবস্থা হবে না; কারণ, মহিলার জন্য বিনা মাহরামে সফর করা ইসলামী বিধানে নিষিদ্ধ। তাই কোন মহিলার জন্য বিনা মাহরামে হাজ্জ বা অন্য কোন সফর জায়েয নয়, সে সফর দূরের হোক কিংবা কাছের, তার সঙ্গে আরো অন্যন্য মহিলারা থাক বা না থাক, উক্ত মহিলা যুবতী, সুন্দরী হোক অথবা বৃদ্ধা ও কুৎসিত। আর সে সফর বিমানে হোক কিংবা অন্য কোন যানবাহনে হোক।

যার প্রমাণ আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) এর বর্ণিত হাদীস, তিনি প্রিয় নাবী (সা.)-কে খুতবায় বলতে শুনেছেন:

لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا وَمَعَهَا ذُو مَحْرَمٍ وَلَا تُسَافِرْ الْمَرْأَةُ إِلَّا مَعَ ذِي مَحْرَمٍ فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ امْرَأَتِي خَرَجَتْ حَاجَّةً وَإِنِّي اكْتُتِبْتُ فِي غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا قَالَ انْطَلِقْ فَحُجَّ مَعَ امْرَأَتِك) متفقٌ عَلَيْهِ

কোন পুরুষ যেন অপর কোন মহিলার সাথে তার মাহরাম ছাড়া নির্জনতা অবলম্বন না করে, আর কোন মহিলা যেন বিনা মাহরামে সফর না করে। তখন জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমার স্ত্রী হাজ্জের উদ্দেশ্যে প্রস্ত্তত হয়েছে, আর আমি অমুক অমুক যুদ্ধে আমার নাম লিখিয়ে ফেলেছি (এখন আমি কী করব?) নাবী (সা.) বললেন: যাও, তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে হাজ্জ কর।[9]

নাবী (সা.) ঐ ব্যক্তিকে বিস্তারিত কিছু জিজ্ঞেস করেননি যে, তার স্ত্রীর সঙ্গে অন্য কোন মহিলা আছে কি না? বা তার স্ত্রী যুবতী, সুন্দরী কি না? অথবা ইহাও জিজ্ঞেস করেননি যে, রাস্তায় নিরাপত্তা আছে কি না?

আর বিনা মাহরামে মহিলাদের সফর করতে নিষেধ করার রহস্য হচ্ছে মহিলাদের যাবতীয় অনিষ্ট ও ফিতনা থেকে সুরক্ষিত রাখা এবং তাদেরকে বদ প্রকৃতি মানুষ ও পাপিষ্টদের থেকে রক্ষা করা। কারণ, নারী জাতি জ্ঞানে-বুদ্ধির দিক থেকে দুর্বল এবং নিজের প্রতিরক্ষায় অপারগ, তার সাথে খারাপ চরিত্রের পুরুষরা তাদের সম্পর্কে অসৎ উদ্দেশ্য রাখতে পারে, ফলে কখনো মহিলা পুরুষদের দ্বারা প্রতারিতা হতে পারে বা ধর্ষিতাও হতে পারে। তাই যুক্তিসঙ্গত হচ্ছে যে, মহিলা যেন মাহরামের সঙ্গে সফর করে যাতে করে সে তার সুরক্ষা ও হেফাযত করতে পারে। এজন্যই মাহরামের জন্য সাবালক এবং বিবেকসম্পন্ন হওয়া আবশ্যক। সুতরাং মাহরাম নাবালক বা পাগল হলে তা যথেষ্ট নয়।

আর মাহরাম বলা হয়, স্বামী বা এমন সাবালক পুরুষ ব্যক্তিকে যার সাথে সফরে ইচ্ছুক মহিলার স্থায়ীভাবে বংশীয় সম্পর্কের কারণে, স্তন্যদানের সম্পর্কের কারণে কিংবা বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে বিবাহ হারাম।

ক। বংশীয় সম্পর্কের কারণে সাত প্রকারের পুরুষের সঙ্গে বিবাহ হারাম:

১। বংশের মূল ব্যক্তিরা, আর তারা হলেন বাবা, দাদা বা নানা এবং তাঁদের বাপ-দাদারা, তারা বংশ পরম্পরায় যতই উপরের হোক না কেন, তাঁরা মায়ের পক্ষ থেকে হোক কিংবা বাবার পক্ষ থেকে হোক (অর্থাৎ বাবার দাদা ও নানা এবং মায়ের দাদা ও নানা)

২। বংশের শাখা-প্রশাখা: আর তারা হচ্ছে ছেলেরা, ছেলের ছেলেরা এবং মেয়ের ছেলেরা তারা বংশ পরম্পরায় যতই নিচের হোক না কেন।

৩। ভাইয়েরা, তারা আপন ভাই হোক, বৈ মাত্রীয় ভাই হোক কিংবা বৈ পিত্রীয় ভাই হোক।

৪। চাচারা, আপন চাচা হোক, বৈ মাত্রীয় চাচা হোক কিংবা বৈ পিত্রীয় চাচা হোক। আর তারা মহিলার চাচা হোক কিংবা মহিলার বাপ-দাদার চাচা কিংবা মহিলার মা বা দাদী-নানীর চাচা হোক। কারণ, ইসলামী বিধানে কোন ব্যক্তির চাচা তার ও তার ছেলে-মেয়ে পোতা-পোতিন ও নাতী-নাতিন সকলের চাচা বলে গণ্য হয়, তারা বংশ পরম্পরায় যতই নিচের হোক না কেন।

৫। মামারা, আপন মামা হোক, বৈ মাত্রীয় মামা হোক কিংবা বৈ পিত্রীয় মামা হোক। আর তারা মহিলার মামা হোক কিংবা মহিলার বাপ-দাদার মামা কিংবা মহিলার মা বা দাদী-নানীর মামা হোক। কারণ, ইসলামী বিধানে কোন ব্যক্তির মামা তার ও তার ছেলে-মেয়ে পোতা-পোতিন ও নাতী-নাতিন সকলের মামা বলে গণ্য হয়, তারা বংশ পরম্পরায় যতই নিচের হোক না কেন।

৬। ভাইয়ের ছেলেরা (ভাস্তে), তাদের ছেলেরা এবং তাদের মেয়েদের ছেলেরা, তারা বংশ পরম্পরায় যতই নিচের হোক না কেন। তারা আপন ভাস্তে হোক, বৈ মাত্রীয় ভাস্তে হোক কিংবা বৈ পিত্রীয় ভাস্তে হোক।

৭। বোনের ছেলেরা (ভাগ্নে), তাদের ছেলেরা এবং তাদের মেয়েদের ছেলেরা, তারা বংশ পরম্পরায় যতই নিচের হোক না কেন। তারা আপন বোনের ছেলে হোক, বৈ মাত্রীয় বোনের ছেলে হোক কিংবা বৈ পিত্রীয় বোনের ছেলে হোক।

খ। স্তন্যদানের সম্পর্কের কারণে ঐ সমস্ত মহিলাদের বিবাহ করা হারাম যারা বংশীয় সম্পর্কের কারণে হারাম। কারণ, নাবী (সা.) বলেছেন:

(يَحْرُمُ مِنْ الرَّضَاعِ مَا يَحْرُمُ مِنْ النَّسَب) متفق عليه

যে সব মহিলাদের বিবাহ করা বংশীয় সম্পর্কের কারণে হারাম তারা দুধ পানের করণেও হারাম হয়ে যায়।[10]

গ। বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে যারা মাহরাম তারা চার প্রকারের:

১। কোন মহিলার স্বামীর ছেলেরা (স্বামীর অন্য স্ত্রীর গর্ভের), তার স্বামীর ছেলেদের ছেলেরা (পৌত্র) এবং স্বামীর মেয়েদের ছেলেরা, তারা বংশ পরম্পরায় যতই নিচের হোক না কেন।

২। মহিলার স্বামীর বাবা, দাদা ও নানা, তারা বংশ পরম্পরায় যতই উপরের হোক না কেন।

৩। মহিলার মেয়েদের স্বামীরা (জামাই), তার ছেলেদের কন্যাদের স্বামীরা (পোতা জামাই) এবং তার মেয়েদের কন্যাদের স্বামীরা (নাতী জামাই), তারা বংশ পরম্পরায় যতই নিচের হোক না কেন। এই তিন শ্রেণীর লোকেরা বিবাহ বন্ধন হওয়া মাত্রই স্থায়ীভাবে হারাম হয়ে যাবে, যদিও স্ত্রীর সাথে নির্জনতা অবলম্বন বা মিলনের পূর্বে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

৪। মহিলার মায়ের স্বামীরা এবং মহিলার দাদী ও নানীর স্বামীরা তারা বংশ পরম্পরায় যতই উপরের হোক না কেন। তবে এই শ্রেণীর লোকেরা তাদের স্বামী-স্ত্রীর মিলন না হওয়া পর্যন্ত (শুধুমাত্র বিবাহ বন্ধনের কারণে) মাহরাম (স্থায়ীভাবে হারাম) সাব্যস্ত হবে না। সুতরাং কোন পুরুষ বিবাহ করার পরে মিলনের পূর্বেই যদি তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয় তবে উক্ত পুরুষ তার এই তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর মেয়েদের জন্য মাহরাম বলে গণ্য হবে না, এই মেয়েরা বংশ পরম্পরায় যতই নিচের হোক না কেন।

যদি কোন ব্যক্তি আর্থিকভাবে সামর্থবান না হয় তাহলে তার প্রতি হাজ্জ ফরয নয়। আর যদি আর্থিকভাবে সচ্ছল হয় কিন্তু শারীরিক দিক থেকে অপারগ, তাহলে দেখতে হবে যে, তার এই অক্ষমতা বিদূরিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না? যদি তার এই বাধা দূর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যেমন এমন ব্যধি যার আরোগ্যের আশা রয়েছে তবে রোগের আরোগ্যতা লাভ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে, অতঃপর নিজের হাজ্জ নিজেই সম্পাদন করবে। আর যদি অপারগতা এমন হয় যে তা বিদূরিত হওয়ার আশা করা যায় না; যেমন বার্ধক্য বা দূরারোগ্য ব্যধি, তাহলে যে কোন আল্লাহভীরু মুসলিম ব্যক্তিকে (পুরুষ হোক বা নারী) দিয়ে বদল হাজ্জ করিয়ে নিবে।

এর দলীল আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) এর বর্ণিত হাদীস, তিনি বলেন, খাস্’আম গোত্রের জনৈক মহিলা জিজ্ঞেস করল: হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতার প্রতি তাঁর চরম বার্ধক্য অবস্থায় হাজ্জ ফরয হয়ে পড়েছে, কিন্তু তিনি বাহনের উপর বসতে মোটেই সক্ষম নন ? তিনি (সা.) উত্তরে বললেন: তুমি তার পক্ষ হতে হাজ্জ করে নাও।[11]

এই হচ্ছে হাজ্জের শর্তাবলী, কোন ব্যক্তির উপর হাজ্জ ফরয হওয়ার জন্য যা আবশ্যক। আর তা মহান আল্লাহর প্রজ্ঞা, দয়া ও ন্যায়- নীতির অনুকুলে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন:

(وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللّهِ حُكْماً لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ ) المائدة50

দৃঢ় বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য আইন-বিধান প্রদানে আল্লাহ হতে কে বেশী শ্রেষ্ঠ?[12]

>
[1]. সূরা তাওবাহ ৯: ৫৪

[2]. সূরাহ আন্-নূর ২৪:৫৯

[3]. সহীহ বুখারী ৮৭৯ ও সহীহ মুসলিম।

[4]. তিরমিযী, হাদীসটি সহীহ। এটা ছিল কুরায়যার গোত্রের ইয়াহুদীদের ক্ষেত্রে তাদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে মহান আল্লাহর চুড়ান্ত ফায়সালা।

[5]. বুখারী ৪০৯৭ ও মুসলিম

[6]. মুসনাদ আহমাদ, আবূ দাঊদ ও নাসঈ, এবং ইমাম হাকিম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

[7]. সহীহ মুসলিম

[8]. সূরা আল ইমরান ৩:৯৭

[9]. বুখারী ও মুসলিম ১৩৪১।

[10]. বুখারী ২৬৪৫ ও মুসলিম, ইবনে মাজাহ ১৯৩৭, নাসাঈ ৩৩০১।

[11]. মুসনাদ আহমাদ, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, আবূ দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ

[12] সূরাহ আল-মায়িদাহ ৫ঃ ৫০

Comments

|| Popular Posts ||

Sura al imran Chapter___ 3_ Tafser

Bilqis(Queen of Sheba): Tafseer of Ibn katheer : Qur'anic Story

Eid e Milad bidah | Ruling On Celebrating The Birthday Of Prophet Muhammad

Dua for Relief Distress, Laziness, Debts :

female Islamic baby name

গর্ভাবস্থায় বমি :

Hadith on Shukr: Take advantage of five blessings before deprived

তামাত্তু হজ্জ : Hajj e tamattu bangla