সূরা হুজুরাত মানব জাতির জন্য হাদিয়া -হাফেয আব্দুল মতীন মাদানী (পর্ব-২)

 (পর্ব-২)

(৩)  আল্লাহর  রাসূল (ছা.)-এর সামনে কণ্ঠস্বর নীচু করা :

মহান আল্লাহ বলেন,

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَنْ تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تَشْعُرُونَ – إِنَّ الَّذِينَ يَغُضُّونَ أَصْوَاتَهُمْ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ أُولَئِكَ الَّذِينَ امْتَحَنَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ لِلتَّقْوَى لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ عَظِيمٌ – إِنَّ الَّذِينَ يُنَادُونَكَ مِنْ وَرَاءِ الْحُجُرَاتِ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ – وَلَوْ أَنَّهُمْ صَبَرُوا حَتَّى تَخْرُجَ إِلَيْهِمْ لَكَانَ خَيْرًا لَهُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ

‘হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের উপর নিজেদের কণ্ঠস্বর উঁচু করো না এবং নিজেদের মধ্যে যেভাবে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলো, তার সাথে সেরূপ উচ্চৈঃস্বরে কথা বলো না, এতে তোমাদের কর্ম নষ্ট হয়ে যাবে তোমাদের অজান্তে। যারা আল্লাহর  রাসূল (ছা.)-এর সামনে নিজেদের কণ্ঠস্বর নীচু করে, আল্লাহ তাদের অন্তরকে তাক্বওয়ার জন্য পরীক্ষা করেছেন, তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরস্কার। যারা কক্ষসমূহের পিছন হতে তোমাকে উচ্চস্বরে ডাকে, তাদের অধিকাংশই নির্বোধ। তুমি বের হয়ে তাদের নিকট আসা পর্যন্ত যদি তারা ধৈর্যধারণ করতো, তবে তা-ই তাদের জন্যে উত্তম হত। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (হুজুরাত, ২-৫)।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ – رضى الله عنه – أَنَّ النَّبِىَّ – صلى الله عليه وسلم – افْتَقَدَ ثَابِتَ بْنَ قَيْسٍ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَا أَعْلَمُ لَكَ عِلْمَهُ . فَأَتَاهُ فَوَجَدَهُ جَالِسًا فِى بَيْتِهِ مُنَكِّسًا رَأْسَهُ فَقَالَ لَهُ مَا شَأْنُكَ. فَقَالَ شَرٌّ . كَانَ يَرْفَعُ صَوْتَهُ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِىِّ – صلى الله عليه وسلم – فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ، وَهْوَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ . فَأَتَى الرَّجُلُ النَّبِىَّ – صلى الله عليه وسلم – فَأَخْبَرَهُ أَنَّهُ قَالَ كَذَا وَكَذَا – فَقَالَ مُوسَى – فَرَجَعَ إِلَيْهِ الْمَرَّةَ الآخِرَةَ بِبِشَارَةٍ عَظِيمَةٍ فَقَالَ «اذْهَبْ إِلَيْهِ فَقُلْ لَهُ إِنَّكَ لَسْتَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ، وَلَكِنَّكَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ

আনাস ইবনে মালিক (রা.)-হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী করীম (ছা.) ছাবিত ইবনে ক্বায়েস (রা.)-কে খুঁজে পেলেন না। একজন ছাহাবী বললেন, হে আল্লাহর  রাসূল (ছা.)! আমি আপনার কাছে তার সংবাদ নিয়ে আসছি। তারপর লোকটি তার কাছে গিয়ে দেখলেন যে, তিনি তার ঘরে মাথা নীচু করে বসে আছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার অবস্থা কী? তিনি বললেন, খারাপ। কারণ এই (অধম) তার আওয়ায নবী করীম (ছা.)-এর আওয়াযের চেয়ে উঁচু করে কথা বলতো। ফলে তার আমল বরবাদ হয়ে  গেছে এবং সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। তারপর লোকটি নবী করীম (ছা.)-এর কাছে ফিরে এসে খবর দিলেন যে, তিনি এমন এমন কথা বলছেন। মূসা বললেন, এরপর লোকটি এক মহাসংবাদ নিয়ে তার কাছে ফিরে গেলেন, (এবং বললেন) নবী করীম (ছা.) আমাকে বলেছেন, ‘তুমি যাও এবং তাকে বলো, তুমি জাহান্নামী নও, তুমি জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত’।[1]

(৪) যে কোনো সংবাদ যাচাই-বাছাই করতে হবে :

কেউ কোনো কথা বলল আর আমি অন্ধের মতো বিশ্বাস করলাম, এটা হবে না; বরং যাচাই-বাছাই করে কথা বলতে হবে। যাচাই-বাছাই না করার কারণে আজকের সমাজে এতো বিভেদ, এতো সমস্যা। একে অপরের মাঝে হিংসা-বিদ্বেষ শুরু হয়। মানুষ লাঞ্ছিত হয়, অপমানিত হয়। তাই মহান আল্লাহ মানব জাতির কল্যাণের জন্য কোনো ব্যক্তি কোনো কথা বা সংবাদ নিয়ে আসলে আগে তার সম্পর্কে সঠিক তথ্য জেনে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বলেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَنْ تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ ‘হে মুমিনগণ! যদি ফাসিক্ব তোমাদের নিকট কোনো বার্তা নিয়ে আসে, তবে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়কে কষ্ট না পৌঁছাও যাতে পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হয়ে যাও’ (হুজুরাত, ৬)।

আয়েশা (রা.)-এর ইফ্কের ঘটনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, তদন্ত ছাড়া কোনো কথা বলা যাবে না, কারো বিরুদ্ধে বলা যাবে না। আল্লাহর  রাসূল শ্রেষ্ঠ রাসূল হওয়ার পরও মুনাফিক্বদের কথাকে সরাসরি মিথ্যা বলেননি; বরং অহির অপেক্ষা করেছেন। আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, যখন মিথ্যা অপবাদ আরোপকারীরা আয়েশা (রা.)-এর বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অপবাদ রটিয়েছিল। তিনি বলেন, অহি আসতে দেরী হচ্ছিল, তখন রাসূল (ছা.) আলী ইবনে আবু তালিব ও উসামা ইবনে যায়েদ (রা.)-এর সাথে পরামর্শ করার জন্য তাদেরকে ডাকলেন এবং তাঁর স্ত্রী আয়েশা (রা.)-কে পৃথক করে দেওয়া সম্পর্কে পরামর্শ চাইলেন। উসামা (রা.) নবী (ছা.)-এর পরিবারের পবিত্রতার ব্যাপারে তাঁর যা জানা ছিল, তা উল্লেখ করলেন আর আলী (রা.) বলেন, আল্লাহ আপনার জন্য তো কোনো সীমাবদ্ধতা রাখেননি, স্ত্রীলোক তিনি ছাড়া তো আরো অনেকে আছেন। আপনি বাঁদীটির কাছে জিজ্ঞেস করুন, সে আপনাকে সত্য যা তাই বলবে, তখন রাসূল (ছা.) বারীরাকে ডাকলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি সন্দেহের কিছু দেখছো? তিনি বলেন, আমি এ ছাড়া আর অধিক কিছু জানি না যে, আয়েশা (রা.) হচ্ছেন অল্প বয়স্কা মেয়ে। তিনি নিজের ঘরের আটা পিষে ঘুমিয়ে পড়েন, এই অবস্থায় বকরী এসে তা খেয়ে ফেলে। এরপর নবী (ছা.) মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘হে মুসলিমগণ! যে ব্যক্তি আমার পরিবারের অপবাদ রটিয়ে আমাকে কষ্ট দিয়েছে, তার প্রতিকার করতে আমাকে সাহায্য করার মতো কেউ আছো কি? আল্লাহর  শপথ! আমি আমার পরিবারের ব্যাপারে ভালো ব্যতীত মন্দ কিছুই জানি না এবং তিনি আয়েশা (রা.)-এর পবিত্রতার কথা উল্লেখ করলেন।[2]

আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছা.) লোকদের সামনে খুৎবা দিলেন, আল্লাহর  প্রশংসা ও গুণগান করলেন, এরপর তিনি বললেন, ‘যারা আমার স্ত্রীর অপবাদ রটিয়ে বেড়াচ্ছে, তাদের সম্পর্কে তোমরা আমাকে কী পরামর্শ দাও। আমি আমার পরিবারের কারো মধ্যে কখনো খারাপ কিছু দেখিনি’। উরওয়াহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আয়েশা (রা.)-কে সেই অপবাদ সম্পর্কে জানানো হলে তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছা.)! আমাকে আমার পরিজনের (বাবা-মার) কাছে যাবার অনুমতি দিবেন কি? তখন রাসূল (ছা.) অনুমতি দিলেন এবং তাঁর সঙ্গে একজন গোলামও পাঠালেন। এক আনছারী বললেন, তুমিই পবিত্র, হে আল্লাহ! এ ধরনের কথা বলা আমাদের উচিত নয়। হে আল্লাহ! এটা তো এক বিরাট অপবাদ, তোমারই পবিত্রতা।[3]   আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর  কসম! রাসূল (ছা.) দাঁড়াননি এবং ঘরের কেউ বের হননি। এমন সময় রাসূল (ছা.)-এর প্রতি অহি অবতীর্ণ হতে লাগল এবং তাঁর শরীর ঘামতে লাগল এমনকি যদিও শীতের দিন ছিল, তবুও তাঁর উপর অহি অবতীর্ণ হচ্ছিল বলে মুক্তার মতো তাঁর ঘাম ঝরছিল। যখন অহি শেষ হলো, তখন রাসূল (ছা.) হাসলেন। সে সময় তিনি প্রথম যে বাক্যটি বলেছিলেন তা হলো, ‘হে আয়েশা! আল্লাহ তোমার নির্দোষিতা প্রকাশ করেছেন’। এ সময় আমার মা আমাকে বললেন, তুমি উঠে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। আমি বললাম, আল্লাহর  কসম! আমি তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব না, আল্লাহ ব্যতীত আর কারো প্রশংসা করব না। আল্লাহ তা‘আলা পূর্ণ দশ আয়াত পর্যন্ত অবতীর্ণ করলেন। যারা এ অপবাদ রটনা করেছেন, তারা তোমাদেরই একটি দল।[4]  আর যে (মুনাফিক্ব) ব্যক্তি আয়েশা (রা.) সম্পর্কে এ অপবাদের নেতৃত্ব দিয়েছিল, সে ছিল (মুনাফিক্ব সরদার) আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালূল।[5]

সুতরাং মুনাফিক্বদের সম্পর্কে সাবধান! মুনাফিক্বরা ফিতনা-ফাসাদ রটাতে খুব পসন্দ করে, একে অপরের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করতে খুব বেশি পসন্দ করে। এদের চরিত্র ইবলীসের মতো। ইবলীস শয়তান সবসময় চায় ফিতনা-ফাসাদ করতে, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিভেদ ঘটাতে, সমাজের মাঝে বিভেদ ঘটাতে, ভাই-ভাই এর মাঝে সম্পর্ক ছিন্ন করতে, উস্তাদ-ছাত্রের মাঝে সম্পর্ক নষ্ট করতে, একে অপরের মাঝে সম্পর্ক ভাঙতে। মহান আল্লাহ বলেন, إِذَا جَاءَكَ الْمُنَافِقُونَ قَالُوا نَشْهَدُ إِنَّكَ لَرَسُولُ اللَّهِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ إِنَّكَ لَرَسُولُهُ وَاللَّهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ ‘যখন মুনাফিক্বরা তোমার নিকট আসে তখন তারা বলে, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর  রাসূল। আল্লাহ জানেন যে, তুমি নিশ্চয়ই তাঁর রাসূল এবং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিক্বরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী’ (মুনাফিকুন, ১)।

সুতরাং আপনার নিকট কেউ ভালো হওয়ার জন্য কারো বিরুদ্ধে কথা বললে আপনি সাবধান! অনুমান করে যাচাই-বাচাই ছাড়া কথা বলা থেকে সাবধান! মহান আল্লাহ বলেন, إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَمَا تَهْوَى الْأَنْفُسُ وَلَقَدْ جَاءَهُمْ مِنْ رَبِّهِمُ الْهُدَى ‘তারা তো শুধু অনুমান এবং তাদের প্রবৃত্তি যা চায় তারই অনুসরণ করে, অথচ তাদের নিকট তাদের প্রতিপালকের হেদায়াত এসেছে’ (নাজম, ২৩)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَمَا لَهُمْ بِهِ مِنْ عِلْمٍ إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنَّ الظَّنَّ لَا يُغْنِي مِنَ الْحَقِّ شَيْئًا ‘অথচ এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই, তারা শুধু অনুমানের অনুসরণ করে, সত্যের মুকাবিলায় অনুমানের কোনো মূল্য নেই’ (নাজম, ২৮)।

তাই যাচাই-বাছাই করা একান্ত যরূরী। হাফ্ছ ইবনে আছেম (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছা.) বলেন, ‘ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তাই বলে বেড়ায়’।[6]  হাসান ইবনে আলী (রা.) বলেন, আমি রাসূল (ছা.) থেকে মুখস্থ করেছি, তিনি বলেন, ‘সন্দেহপূর্ণ বিষয় ছেড়ে দিয়ে যাতে সন্দেহ নেই তা গ্রহণ করো। নিশ্চয়ই সত্য বিষয় প্রশান্তি দেয় আর মিথ্যা বিষয় সন্দেহযুক্ত হয়’।[7]

(৫) ঈমানের স্বাদ অতুলনীয় :

ঈমান হচ্ছে অন্তরের  বিশ্বাস, মুখের স্বীকৃতি এবং অঙ্গ-প্রতঙ্গের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা। অমুসলিম ব্যক্তি যখন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে, তখন তাকে অবশ্যই অন্তরে বিশ্বাসের সাথে সাথে মুখের স্বীকৃতি দিতে হবে এভাবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য মা‘বূদ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ছা.) আল্লাহর  বান্দা ও রাসূল। এরপর তার অঙ্গ-প্রতঙ্গের মাধ্যমে আমল করতে হবে। ছালাত আদায় করবে সঠিকভাবে, যাকাত ফরয হলে যাকাত দিবে, হজ্জ ফরয হলে হজ্জ পালন করবে, ছিয়াম সাধনা করবে, হালালগুলো গ্রহণ করবে, হারাম থেকে নিজেকে রক্ষা করবে, অন্যায়-অপকর্ম থেকে নিজেকে রক্ষা করবে, সৎকাজে আদেশ করবে, অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। সে জন্যই তো ঈমানদার ব্যক্তির নিকট তার ঈমানই আসল। এজন্যই সে কুফরীকে ঘৃণা করে, কুফরী কাজ-কর্ম থেকে নিজেকে রক্ষা করে, শিরক-বিদ‘আত থেকে নিজেকে রক্ষা করে। মহান আল্লাহ বলেন,

وَاعْلَمُوا أَنَّ فِيكُمْ رَسُولَ اللَّهِ لَوْ يُطِيعُكُمْ فِي كَثِيرٍ مِنَ الْأَمْرِ لَعَنِتُّمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ الْإِيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ أُولَئِكَ هُمُ الرَّاشِدُونَ – فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَنِعْمَةً وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

‘তোমরা জেনে রেখো যে, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল রয়েছেন, তিনি বহু বিষয়ে তোমাদের কথা শুনলে তোমরাই কষ্ট পাবে, কিন্তু আল্লাহ তোমাদের নিকট ঈমানকে সব থেকে প্রিয় করেছেন এবং সেটাকে তোমাদের হৃদয়গ্রাহীও করেছেন; কুফরী, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে তোমাদের নিকট অপ্রিয় করেছেন, এরাই সৎ পথের পথিক। (এটা) আল্লাহর  দান ও অনুগ্রহ; আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়’ (হুজুরাত, ৭-৮)। মহান আল্লাহ বলেন,

لَيْسَ الْبِرَّ أَنْ تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَى حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ أُولَئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ

‘তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল পূর্ব বা পশ্চিম দিকে প্রত্যাবর্তিত করলে তাতে পুণ্য নেই; বরং পুণ্য তার, যে আল্লাহর  প্রতি, পরকালের প্রতি, ফেরেশতাগণের প্রতি, নাযিলকৃত গ্রন্থের প্রতি, নবীগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তারই ভালোবাসা অর্জনের জন্য আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীনগণ, দরিদ্রগণ, পথিকগণ ও ভিক্ষুকগণকে এবং দাসত্ব মোচনের জন্য ধন-সম্পদ দান করে; ছালাত প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত প্রদান করে এবং অঙ্গীকার করলে যারা সেই অঙ্গীকার পূর্ণকারী হয় এবং যারা অভাবে ও ক্লেশে এবং যুদ্ধকালে ধৈর্যশীল তারাই সত্যপরায়ণ এবং তারাই আল্লাহভীরু’ (বাক্বারাহ, ১৭৭)।

মুমিন, মুত্তাক্বী ও ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন

الم (1) ذَلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِلْمُتَّقِينَ (2) الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ (3) وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ وَبِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ (4) أُولَئِكَ عَلَى هُدًى مِنْ رَبِّهِمْ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (5)

‘এটা এমন একটি গ্রন্থ, যার মধ্যে কোনো প্রকার সন্দেহ নেই, আল্লাহভীরুদের (পরহেযগারদের) জন্য এ গ্রন্থ হেদায়াত বা মুক্তির দিশারী। যারা অদৃশ্য বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস করে, ছালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি, তা হতে ব্যয় করে থাকে এবং যারা তোমার প্রতি যে গ্রন্থ অবতীর্ণ হয়েছে, তার প্রতি ও তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছিল, তদ্বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং পরকালের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখে, এরাই তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে হেদায়াতপ্রাপ্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এরাই সফলকাম’ (বাকারাহ, ১-৫)। এরাই আল্লাহর  অলী। তারা মানুষকে অন্ধকারের পথ থেকে আলোর পথে নিয়ে আসে। মহান আল্লাহ বলেন, اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُمْ مِنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ ‘আল্লাহ হচ্ছে মুমিনদের অভিভাবক। তিনি তাদেরকে অন্ধকার হতে আলোর দিকে নিয়ে যান। আর যারা অবিশ্বাস করেছে, শয়তান তাদের পৃষ্টপোষক, সে তাদেরকে আলোর পথ থেকে বের করে অন্ধকারের পথের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী ও এর মধ্যে তারা চিরকাল অবস্থান করবে’ (বাক্বারাহ, ২৫৭)।

ঈমানদার ব্যক্তিরাই ইহলোক-পরলোকে সাফল্যময় জীবন যাপন করবে এবং পরকালে জান্নাতুল ফেরদাঊসের অধিকারী হবে। মহান আল্লাহ বলেন,

قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ (1) الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ (2) وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ (3) وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ (4) وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ (5) إِلَّا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ (6) فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاءَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْعَادُونَ (7) وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ (8) وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ (9) أُولَئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ (10) الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ (11)

‘অবশ্যই মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে। যারা তাদের ছালাত বিনয়, নম্রতা ও ভয়-ভীতি সহকারে আদায় করে। যারা অসার (অপ্রয়োজনীয়) ক্রিয়াকলাপ হতে নিজেকে রক্ষা করে। যারা যাকাত প্রদান করে, নিজেদের যৌনাঙ্গকে হেফাযত করে; নিজের পত্নী অথবা অধিকারভুক্ত দাসীগণ ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। সুতরাং কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা হবে সীমালঙ্ঘনকারী এবং যারা আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। আর যারা নিজেদের ছালাতে যত্নবান থাকে। তারাই হবে উত্তরাধিকারী। উত্তরাধিকারী হবে ফেরদাঊসের, যাতে তারা স্থায়ী হবে’ (মুমিনূন, ১-১১)।

আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছা.) বলেন,

ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلاَوَةَ الإِيمَانِ أَنْ يَكُونَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا ، وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لاَ يُحِبُّهُ إِلاَّ لِلَّهِ ، وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِى الْكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِى النَّارِ

‘তিনটি গুণ যার মধ্যে আছে, সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে- (১) আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার নিকট অন্য সকল কিছু হতে অধিক প্রিয় হওয়া, (২) কাউকে একমাত্র আল্লাহর  জন্যই ভালোবাসা এবং (৩) কুফরীতে প্রত্যাবর্তনকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপসন্দ করা’।[8]  আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছা.) বলেছেন, لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, তার সন্তান-সন্ততি ও সকল মানুষ অপেক্ষা অধিক প্রিয়পাত্র হই’।[9]

ঈমানদার ব্যক্তিরা যে সকল আমল করে, সেগুলো আল্লাহর  নিকট কবুল হচ্ছে কিনা- সর্বদায় সে ভয় করে। রাসূল (ছা.)-এর স্ত্রী আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসূল (ছা.)-কে এ আয়াত প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলাম, তারা যা কিছুই দান করে, তাতে তাদের অন্তর প্রকম্পিত থাকে (মুমিনূন, ৬০); আয়েশা (রা.) বলেন, এরা কি মদখোর ও চোর? তিনি বললেন, ‘হে ছিদ্দীক্বের মেয়ে! না, এরা তা নয় এবং যারা ছালাত আদায় করে, ছিয়াম পালন করে, দান-খয়রাত করে এবং মনে মনে এই ভয় পোষণ করে যে, তাদের পক্ষ হতে এগুলো কবুল করা হল কি-না? এরাই কল্যাণের কাজ দ্রুত শেষ করে এবং তাতে অগ্রগামী হয়’।[10]   তাই তো ঈমানদারদের গোপন-প্রকাশ্য সকল আমল আল্লাহর  সন্তুষ্টির জন্য হয়। ছালাত, যাকাত, ছিয়াম, হজ্জ, যবেহ, কুরবানী, নযর-নিয়ায, ভয়-ভীতি, আশা-ভরসা, দু‘আ-প্রার্থনা, চাওয়া-পাওয়া, ভালোবাসা আল্লাহর  জন্য, রাগ করা আল্লাহর  জন্য, দান করা আল্লাহর  জন্য। আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর  জন্য কাউকে ভালোবাসে, আল্লাহর জন্য রাগ করে, আল্লাহর  জন্য দান করে এবং আল্লাহর  জন্য নিষেধ করে, সে যেন তার ঈমানকে পরিপূর্ণ করে’।[11]   সুতরাং মানব জীবনে তাদের নেক আমলগুলো আল্লাহর  সন্তুষ্টির জন্য করলেই তাদের জীবনে সফলতা আসবে।[12]

(৬) মুমিন ব্যক্তিদের বড় পাপে পতিত হওয়া :

মুমিন ব্যক্তিরা বড় পাপের কারণে দ্বীন থেকে বের হয়ে যায় না; বরং তাদের ঈমান কমে যায়, তাদেরকে ফাসেক্ব বলা হয়। কিন্তু তারা দ্বীন থেকে বের হয় না। কারণ ঈমান হচ্ছে অন্তরে  বিশ্বাস, মুখের স্বীকৃতি ও অঙ্গ-প্রতঙ্গের মাধ্যমে আমল করা; আনুগত্যের মাধ্যমে ঈমান বাড়ে এবং পাপ কাজ করার মাধ্যমে ঈমান কমে যায়। মুমিন ব্যক্তিরা একে অপরে মারামারি করে, লড়াই করে মৃত্যুবরণ করলে কাফের হয় না; বরং তারা বড় পাপী হয়। এর অর্থ এই নয় যে, মানুষ ইচ্ছা করে লড়াই করবে। যদি কোনো কারণবশত হয়েও যায় তারপরও তাদের ঈমান থাকে। মহান আল্লাহ বলেন,

وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللَّهِ فَإِنْ فَاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ – إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ

‘মুমিনদের দুই দল যদি দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। যদি তাদের একদল অপর দলের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করে, তবে তোমরা বাড়াবাড়িকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর  নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি তারা ফিরে আসে, তবে তাদের মধ্যে ন্যায়ের সাথে ফায়ছালা করবে এবং সুবিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন। মুমিনরা পরস্পর ভাই-ভাই। সুতরাং তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও’ (হুজুরাত, ৯-১০)। ঈমানের দাবি হলো, মুমিন ব্যক্তিরা একে অপরের মাঝে মারামারি, বিদ্রোহ করবে না। কারণ এটা একটা বড় পাপ। তারপরও যদি হয়ে যায়, তবে তারা ভাই-ভাই থাকে, ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় না। এরূপ কিছু হলে তাদের ন্যায়সঙ্গত ফায়ছালা করে দিবে।[13]

(চলবে)

[1]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৮৪৬।

[2]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৩৬৯।

[3]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৩৭০।

[4]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৭৫০।

[5]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৭৫০।

[6].  ছহীহ মুসলিম, হা/৭; সুনানে আবুদাঊদ, হা/৪৯৯৪।

[7]. সুনানে তিরমিযী, হা/২৫১৪, সনদ ছহীহ।

[8]. ছহীহ বুখারী, হা/১৬।

[9]. ছহীহ বুখারী, হা/১৫।

[10]. সূরা মুমিনূন, ৬১; ইবনে মাজাহ, হা/৪১৯৮; তিরমিযী, হা/৩১,সনদ ছহীহ।

[11]. আবুদাঊদ, হা/৪৬৮১; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৩৮০।

[12]. শারহে আক্বীদা আত-ত্বহাবিয়্যাহ, পৃ. ২১৬-৩১৭।

[13]. তাফসীর আস-সা‘আদী, পৃ. ৮০০।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ

Comments