ছবি-মূর্তির ভয়াবহতা :

 ভূমিকা: ছবি, প্রতিকৃতি ও মূর্তি একটি অপরটির সাথে জড়িত। ইসলাম এগুলোর ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন নাম ও মোড়কে মূর্তিপূজার নিত্যনতুন পদ্ধতি চালু হয়েছে। মূর্তিপূজাকে উৎসাহিত করে এমন সকল বিষয়কে ইসলাম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে ছবি-মূর্তি সম্পর্কে সংক্ষিপ্তাকারে আলোকপাত করার চেষ্টা করব, ইনশা-আল্লাহ।

মূর্তিপূজার প্রচলন: আদম ও নূহ আলাইহিমাস সালাম-এর মধ্যবর্তী দশ যুগ বা প্রজন্ম পর্যন্ত সবাই ইসলামের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল।[1] নূহ আলাইহিস সালাম-এর জাতির মধ্যে সর্বপ্রথম প্রতিমা বা মূর্তিপূজার প্রচলন শুরু হয়।[2] জাহিলিয়াতের যুগে যে সমস্ত গায়রুল্লাহর ইবাদত বা পূজা চালু ছিল, তা ছিল মূর্তি, ভাস্কর্য ও ছবিকেন্দ্রিক। আর ঐ সমস্ত মূর্তি ও ভাস্কর্য ছিল সেই সময়ের সর্বোত্তম নেককার ব্যক্তিবর্গের। যেমন- মহান আল্লাহ বলেন,وَقَالُوا لَا تَذَرُنَّ آلِهَتَكُمْ وَلَا تَذَرُنَّ وَدًّا وَلَا سُوَاعًا وَلَا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسْرًا - وَقَدْ أَضَلُّوا كَثِيرًا ‘আর তারা (নূহ আলাইহিস সালাম-এর জাতির নেতারা) বলত, তোমরা কোনো অবস্থাতেই তোমাদের উপাস্যদেরকে পরিত্যাগ করো না; তোমরা পরিত্যাগ করো না ওয়াদ্দ, সুওয়া‘, ইয়াগূছ, ইয়াঊক্ব ও নাসরকে। আর তারা (নেতারা) তো অনেককেই গোমরাহ করেছে’ (নূহ, ৭১/২৩-২৪)

উক্ত আয়াতে যাদের নাম নেওয়া হয়েছে, তারা ছিলেন নূহ আলাইহিস সালাম-এর জাতির নেককার বান্দাগণ। যখন তারা ইন্তেকাল করেন, তখন শয়তান তাদেরকে কুমন্ত্রণা দেয় যে, তারা যে সমস্ত স্থানে বসত সেখানে তাদের মূর্তি বানিয়ে রাখো আর ঐ মূর্তিদেরকে তাদের নামেই পরিচিত করো। তখন তারা তাই করল, কিন্তু তখনও তাদের ইবাদত করা শুরু হয়নি। তারপর যখন ঐ যামানার লোকেরা মারা গেল, তখন তাদের পরের যুগের লোকেরা ভুলে গেল যে, কেন ঐ মূর্তিগুলো তৈরি করা হয়েছিল। তখনই তাদের পূজা শুরু হয়ে গেল।[3]

আধুনিক যুগে মূর্তি বা ভাস্কর্যপূজা: বর্তমান যুগেও মূর্তি, ভাস্কর্য ও ছবির পূজা করা চলছে। যেমন- খ্রিষ্টানরা তাদের গির্জাসমূহে ঈসা, মারইয়াম আলাইহিমাস সালাম এবং ক্রুশের ছবির পূজা করে। ইউরোপ-আমেরিকায় জর্জ ওয়াশিংটনের ভাস্কর্য, ফ্রান্সে নেপোলিয়নের মূর্তি, রাশিয়ায় লেলিন ও স্টালিনের ভাস্কর্যের পূজা করা হয়। এগুলো বড় বড় রাস্তার মোড়ে স্থাপন করা হয়েছে। তারা এ সমস্ত জাতীয় নেতার সম্মুখ দিয়ে অতিক্রমকালে তাদের মস্তক অবনত করে সম্মান প্রদর্শন করে। আস্তে আস্তে এই সমস্ত ভাস্কর্য ও মূর্তি তৈরির অপসংস্কৃতির প্রতিযোগিতা মুসলিম দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে, যা বিজাতীয়দের অনুকরণ করেই করা হচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশেও শেখ মুজিবসহ বিভিন্ন নেতার মূর্তি ও ভাস্কর্যের প্রতি সম্মানের নামে পূজা করা হচ্ছে। এদের ব্যাপারেই রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ‘যে ব্যক্তি কোনো জাতির অনুকরণ করবে, সেও তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে’।[4] অথচ মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের দায়িত্ব হলো- রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিচের হাদীছগুলো মেনে চলা।

এ ব্যাপারে ইসলামের বিধান: রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে নির্দেশ দিয়ে বলেন,أَنْ لَا تَدَعْ تِمْثَالًا إِلَّا طَمَسْتَهُ وَلَا قَبْرًا مُشْرِفًا إِلَّا سَوَّيْتَهُ ‘যেখানে যত মূর্তিই দেখ না কেন, তাকে ভেঙে টুকরা টুকরা করে ফেলো। আর যত উঁচু কবর দেখবে, তাকে মাটির সাথে বরাবর করে দিবে’।[5] রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, أَشَدُّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ القِيَامَةِ الَّذِينَ يُضَاهُونَ بِخَلْقِ اللَّهِ ‘ক্বিয়ামতের দিন ঐ সমস্ত লোকেরা সবচেয়ে বেশি আযাব ভোগ করবে, যারা আল্লাহর সৃষ্টির মতো সৃষ্টি করে’।[6] ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন,أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا رَأَى الصُّوَرَ فِي البَيْتِ لَمْ يَدْخُلْ حَتَّى أَمَرَ بِهَا فَمُحِيَتْ ‘রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো ঘরে ছবি দেখলে, তা সরিয়ে না ফেলা পর্যন্ত প্রবেশ করতেন না’।[7]

যে সমস্ত জায়গায় ছবি তোলা জায়েয:

(১) পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা এ জাতীয় অতিশয় প্রয়োজনীয় কাজে ছবি তোলা জায়েয।

(২) অপরাধীকে শনাক্তের জন্য ও চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষার জন্য ছবি তোলা জায়েয।

(৩) ছোট ছোট মেয়েদের খেলার জন্য কাপড়ের তৈরি পুতুল জায়েয, যেটা পরিপূর্ণ মানুষের আকৃতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। তবে বিদেশীদের তৈরি পুতুল যা নগ্ন অবস্থায় থাকে তা ক্রয় করা আলেমগণ নাজায়েয বলেছেন।

(৪) গাছপালা, চন্দ্র, তারকা, পাহাড়-পর্বত, সাগর, নদ-নদী, সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য, পবিত্র স্থানের ছবি যেমন- কা‘বাঘর, মদীনার মসজিদে নববী, বায়তুল মাক্বদিস ও অন্যান্য মসজিদের ছবি তোলা জায়েয।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, মূর্তি, প্রতিকৃতি, ভাস্কর্য এগুলো হারাম। এগুলো থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। তবে বিশেষ প্রয়োজনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছবি তোলা জায়েয। অপ্রয়োজনে নিছক শখের বশে এগুলো করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন- আমীন!

 শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, পবা, রাজশাহী।


[1]. ত্ববারী, ২/৩৩৪।

[2]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৯২০।

[3]. ফাতহুল বারী, ৫/৭।

[4]. আবূ দাঊদ, হা/৪০৩১; মিশকাত, হা/৪৩৪৭, হাদীছ ছহীহ।

[5]. ছহীহ মুসলিম, হা/৯৬৯।

[6]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৯৫৪; ছহীহ মুসলিম, হা/২১০৭।

[7]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৩৫২।

Comments

|| Popular Posts ||

বিষয়__ জাহান্নামের স্তরসমূহ এবং শাস্তি _ গ্রন্থঃ জান্নাত-জাহান্নাম

Moving the finger during Tashahhud _ Important Masala-Masael,

Question:What is the correct explanation for the Prophet's saying: "The one who knows the most Qur'aan should lead the people in prayer…"? _ Fatwa collection

আল-ইতিছাম pdf download _ al itisham

The Prophet warns his kindred of idolatry....

The Story of Qarun(Korah)

টাখনুর নীচে কাপড় পরিধানের শাস্তি :

Why Allah sent Prophets and Messengers ? – Muhsin Khan & Hilaali