ইলিয়াসী তাবলীগ নিষিদ্ধের নেপথ্যে

ইলিয়াসী তাবলীগ নিষিদ্ধের নেপথ্যে: 
***************************************** 
আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হওয়া ‘অহী’ তথা কুরআনে কারীম ও ছহীহ হাদীছের দাওয়াতকে মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেয়ার নামই ‘তাবলীগ’। এটা গুরুত্বপূর্ণ ফরয বিধানের অন্তর্ভুক্ত। আর আল্লাহর নাযিল করা শরী‘আতের বাইরে তাবলীগ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ (সূরা আল-মায়েদাহ : ৬৭; ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৬১)। কিন্তু বর্তমানে দাওয়াত ও তাবলীগের নামে যারা মাঠে কাজ করছে তাদের অধিকাংশই কুরআন-হাদীছকে তোয়াক্কা করে না। বরং নিজেদের তৈরি স্ব স্ব তরীকার আলোকে বিদ‘আতী তাবলীগ করে যাচ্ছে এবং শিরক, বিদ‘আত, কুসংস্কার ও জাল, যঈফ, মিথ্যা, বানোয়াট কেচ্ছা-কাহিনী দ্বারা সরল মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এর মধ্যে জনাব ইলিয়াস (১৩০৩-১৩৬৩ হি./১৮৮৫-১৯৪৪ খৃ.) ছাহেবের প্রতিষ্ঠিত তাবলীগ জামায়াত অন্যতম।

১৯২১ সালে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের ‘মেওয়াত’ এলাকায় ‘ফিরোযপুর নিমক’ গ্রামে তিনি এই জামায়াত প্রতিষ্ঠা করেন। এর অনুসরণীয় গ্রন্থ হল ‘তাবলীগী নেছাব’, যা ‘ফাযায়েলে আমল’। ইলিয়াস ছাহেবের জামাই, ভাতিজা এবং ছাত্র জনাব যাকারিয়া (১৩১৭-১৪০২ হি./১৮৯৮-১৯৮২ খৃ.) ছাহেব এর লেখক, যা ১৯৭৫ মোতাবেক ১৩৯৫ হিজরীতে প্রকাশিত হয়। এই জামায়াতের আক্বীদা, তরীকা ও বিভিন্ন শিরকী-বিদ‘আতী কার্যক্রমের কারণে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিশ্ববিখ্যাত উলামায়ে কেরাম সমালোচনা করে আসছেন এবং একে ভ্রান্ত ফের্কা, পথভ্রষ্ট দল বলে উম্মতকে সতর্ক করছেন।

সম্প্রতি নতুন করে সঊদী আরবে এই জামায়াতের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং গত ১০ ডিসেম্বর প্রত্যেকটি মসজিদে জুমু‘আর খুত্ববায় এর ভ্রষ্টতা সম্পর্কে সতর্কতা জারী করা হয়। এই ঘোষণায় উক্ত তাবলীগ জামায়াতকে পথভ্রষ্ট ও বিদ‘আতী ফের্কা হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এর ফলে মূর্খ বিদ‘আতীরা বিশ্ববরেণ্য উলামায়ে কেরামকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে চলেছে। অথচ নিষিদ্ধের কারণগুলো তারা বিশ্লেষণ করেনি। যেমন-
(ক). উক্ত জামায়াত আক্বীদা ও তাওহীদের দাওয়াতকে উৎখাত করে শিরকী ও ঈমান বিধ্বংসী ইলিয়াসী দাওয়াতকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে চায় (হাক্বীক্বাতুদ দাওয়াহ ইলাল্লাহ, পৃ. ৩-৪)। এটা অত্যন্ত ভয়ানক অবস্থা।
(খ). বিশুদ্ধ আক্বীদার ব্যাপারে তাদের কোন ধারণা নেই। বরং তারা অসংখ্য কুফর, শিরক-বিদ‘আত ও কুসংস্কারের মধ্যে নিমজ্জিত (মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতি মুতানাব্বিয়া লিশ শায়খ আব্দুল আযীয, ৮/৩৩১ পৃ.)।
(গ). তারা সালাফদের মানহাজ অনুসরণ করে না, বরং ইসলাম হরণকারী ছূফী মতবাদে বিশ্বাসী এবং দেওবন্দী মানহাজের পূজারী।
(ঘ). তাদের বইগুলো ভ্রষ্টতা ও বিদ‘আতে ভরপুর। সেখানে কবরপূজা ও শিরকের দিকে আহ্বান করা হয়েছে (ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল সামাহাতুশ শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম, ১/২৬৮ পৃ.)।
(ঙ). তারা কুরআন-হাদীছকে অবজ্ঞা করে নিজেদের রচিত ‘ফায়ায়েলে আমল’কে প্রাধান্য দেয়, যার মধ্যে অসংখ্য জাল-যঈফ হাদীছ ও মিথ্যা, বানোয়াট কেচ্ছা-কাহিনীতে ভরপুর। ফলে তারা শিরক-বিদ‘আত ও হালাল-হারামের বিরুদ্ধে মানুষকে সতর্ক করে না। শুধু মিথ্যা ফযীলত বর্ণনা করে থাকে, যেগুলো বিশ্বাস করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।
(চ). তারা ভ্রান্ত ক্বাদিরিয়া ও ছূফী আক্বীদায় বিশ্বাসী (আল-ক্বাওলুল বালীগ, পৃ. ৭, ৩০; ফাতাওয়া ও রাসাইল শায়খ আব্দুর রাযযাক আফীফী, ১/১৪ পৃ.)। একদিকে গোঁড়া হানাফী অন্যদিকে মাতুরীদী ও চিশতিয়া আক্বীদায় বিশ্বাসী (আল-মাজমূঊ ফী তারজমাতিল হাম্মাদ ইবনু মুহাম্মাদ আল-আনছারী, ২/৪৮১, ৫৮৭, ৭৬২-৬৩ পৃ.)। তাছাড়া এই জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ ইলিয়াস মাযহাবে হানাফী, আক্বীদায়ে আশ‘আরী ও মাতুরীদী এবং তরীকায় ছুফী মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন (হাক্বীক্বাতুদ দাওয়াহ, পৃ. ৭৫)।

সম্প্রতি তাদের দু’গ্রুপের বিভক্তিকে কেন্দ্র করে যে খুনাখুনি দেখা গেছে, সঊদী আরব তাকে সন্ত্রাসবাদের প্রবেশদ্বার হিসাবে উল্লেখ করেছে। এছাড়া ‘জামা‘আতুত তাকফীরি ওয়াল হিজরাহ (একটি আতঙ্কবাদী খারেজী সংগঠন)’ এবং ‘মুসলিম ব্রাদারহুডে’র সাথেও তাদের যোগসূত্র আছে বলে ইঙ্গিত করেছে। হারামের হামলাসহ বিভিন্ন ঘটনার সাথে মুসলিম ব্রাদারহুডসহ তাবলীগ জামায়াতেরও কিছু লোকের সম্পৃক্ততা পেয়েছে। তাই সালাফী বিদ্বানগণ গোটা বিশ্বের মুসলিমদেরকে এই জামায়াতের ফেৎনা থেকে বেঁচে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) তাদেরকে পথভ্রষ্ট বাহাত্তর ফের্কার অন্তর্ভুক্ত গণ্য করেছেন (আক্বওয়ালু ঊলামাঈস সুন্নাহ ফী জামা‘আতি ইখওয়ানিল মুসলিমীন)। শায়খ উছায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ) তাদেরকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত থেকে বহিষ্কৃত ঘোষণা করেছেন (লিক্বাউল বাব আল-মাফতূফ, ৮/২৯ পৃ.)। গ্রান্ড মুফতী শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম আলুশ শায়খ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এই সংঘের মাঝে কোন কল্যাণ নেই। বরং এটা একটা বিদ‘আত ও ভ্রষ্ট সংগঠন’ (ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল সামাহাতুশ শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম, ১/২৬৮ পৃ.)।

তাবলীগ জামা‘আতের বই-পুস্তক সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এদের বইগুলোকে পেয়েছি যে, এসব বই ভ্রষ্টতা ও বিদ‘আতে ভরপুর এবং এসব বইয়ে কবরপূজা ও শিরকের দিকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে’ (ঐ)। ইমাম নাছিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘নিশ্চয় তাবলীগ জামা‘আতের দাওয়াত বিদ‘আতী ছূফীবাদের দাওয়াত’ (আল-ক্বাওলুল বালীগ, পৃ. ৭, ৩০)। শায়খ আব্দুর রাযযাক আফীফী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,  ‘প্রকৃতপক্ষে এরা বিপথগামী বিদ‘আতী’ (ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল শায়খ আব্দুর রাযযাক আফীফী, ১/১৪ পৃ.)। শাইখ হামুদ আত-তুওয়াইজীরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘অবশ্যই এরা বিদ‘আত ও ভ্রষ্ট জামা‘আত’ (আল-ক্বাউলুল বালীগ, পৃ. ৭, ৩০)।

অতএব ইলিয়াসী তাবলীগের ফেৎনা থেকে সতর্ক থাকা এবং মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করা আবশ্যক। প্রত্যেক আলেম, দাঈ ও ইমামদের মৌলিক দায়িত্ব হল, মুসলিম উম্মাহকে তাওহীদের দাওয়াত দেয়া এবং সালাফদের মানহাজকে আঁকড়ে ধরার প্রতি উৎসাহিত করা। সেই সাথে কুফরী, শিরকী ও বিদ‘আতী আক্বীদা ও নব্য জাহেলিয়াতের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন করা। আল্লাহ তা‘আলা ইসলাম ও মুসলিম জাতিকে সকল ভ্রান্ত দল ও ফের্কার অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন এবং কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন-আমীন!!

رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا اِنَّکَ اَنۡتَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ

 


Comments

|| Popular Posts ||

The Hasan Hadeeth: Its definition and usage with the Scholars of Hadeeth

The Story of The Aad And The Thamud Nation_ Qur'an Tafseer

√√√√40 short hadiths filled with wisdom°°°°

Suhih Bukhari_ Book of _ Virues of Al-Quran :

Moving the finger during Tashahhud _ Important Masala-Masael,

মৃত্যুর সময় যে আপসোস রয়ে যাবে! :

বনী ইসরাইলের গরুর কাহিনী _ The story of cow

The Story of Qarun(Korah)

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত বনাম প্রচলিত ছালাত